:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
অন্তবর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে কথা বলে সন্ধ্যার মধ্যে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতিদের পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেওয়ার পর তিনি এই ঘোষণা দেন। তবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলে আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ নিবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। শনিবার (১০ আগস্ট) দুপুর ১টা ৫ মিনিটে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল কিছুক্ষণ আগে ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ‘আপনারা শান্ত থাকুন। আপনারা যে দাবিতে আন্দোলন করছেন আমি জানতে পেরেছি, খুব শিগগিরই সেই দাবি পূরণ হচ্ছে।’
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথি ও ঐতিহাসিক নথি রয়েছে। তাঁরা যেন সেসব নথি নষ্ট না করে এবং সুপ্রিম কোর্টে কোনো হামলা না করে।
এর আগে বেলা ১১টা থেকে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ কানায় কানায় ভরে যায়।
সন্ধ্যার মধ্যে পদত্যাগ করবেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান— এমন তথ্য জানানোর পর হাইকোর্ট এলাকা থেকে আন্দোলনকারী সবাইকে সরে যেতে অনুরোধ করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
শনিবার (১০ আগস্ট) দুপুর ১টা ১৫ মিনিটের পর থেকে সবাইকে সরে যেতে অনুরোধ করেন তারা।
এসময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাইকে বলেন, আপনারা সুষ্ঠু বিচারের জন্যই এ আন্দোলন করছেন। প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন। আপনারা এখন এ জায়গা থেকে সরে যান। এতো ভিড়ের মধ্যে যেকোনো অঘটন ঘটাতে পারে। তাতে বিচারশালা ক্ষতিগ্রস্ত হবে ও আপনাদের আন্দোলন বাধাগ্রস্ত হবে। আপনারা সরে যান।
শনিবার (১০ আগস্ট) বেলা ১১টায় হাইকোর্ট চত্বরে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এ আল্টিমেটাম দেন। এ সময় শত শত শিক্ষার্থী হাইকোর্টের ভিতরে ঢুকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন— ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’; ‘দফা এক দাবি এক, বিচারপতির পদত্যাগ’; ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’; ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’; ‘শেখ হাসিনার দালালি, চলবে না চলবে না’।
তিনি বলেন, ঢাকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীসহ আপামর জনতাকে আহ্বান করা হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব আপনারা প্রতিটি এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে হাইকোর্টের দিকে আসুন। হাইকোর্ট ঘেরাও করা হবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একত্র হয়ে মিছিল বের করুন। দেশের প্রতিটি জেলাকোর্ট, জজকোর্ট ও বিচারপতিদের বাসভবন ঘেরাও করা হবে। আজ ফ্যাসিবাদী বিচারব্যবস্থাকে আজ সমূলে উৎখাত করবে গোটা বাংলাদেশ। দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সমিতির নামে যেই ফ্যাসিবাদের মদদপুষ্ট শিক্ষক উইং রয়েছে তা আজ ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে, সকল সিন্ডিকেটকে আজকেই ভেঙে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ঢাকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীসহ আপামর জনতাকে আহ্বান করা হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব আপনারা প্রতিটি এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে হাইকোর্টের দিকে আসুন। হাইকোর্ট ঘেরাও করা হবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একত্র হয়ে মিছিল বের করুন। দেশের প্রতিটি জেলাকোর্ট, জজকোর্ট ও বিচারপতিদের বাসভবন ঘেরাও করা হবে। আজ ফ্যাসিবাদী বিচারব্যবস্থাকে আজ সমূলে উৎখাত করবে গোটা বাংলাদেশ। দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সমিতির নামে যেই ফ্যাসিবাদের মদদপুষ্ট শিক্ষক উইং রয়েছে তা আজ ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে, সকল সিন্ডিকেটকে আজকেই ভেঙে দেওয়া হবে।
হাসনাত বলেন, ছাত্র-জনতার যে গণবিপ্লব সংঘটিত হয়েছে সেটাকে বিতর্কিত করার নানা প্রচেষ্টা চলছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ক্যু করার প্রচেষ্টা দেখেছি। মিলিটারি ক্যু, এডমিনিস্ট্রেটিভ ক্যু এবং আজকে জুডিশিয়ারি ক্যু করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। আমরা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ চেয়ে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম, সেই বিচারপতি অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়ে এক ধরনের ডিজিটাল ক্যু করার চেষ্টা করেছেন। ছাত্র-জনতা এই প্রচেষ্টাকে শক্ত হাতে প্রতিহত করবে।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সরকারের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা না করে ফুল কোর্ট মিটিং ডাকায় হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বিচারপতিদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি আলোচনা করতে সকাল সাড়ে ১০টায় ফুলকোর্ট সভা ডেকেছিলেন প্রধান বিচারপতি। পরে ১০টার মধ্যেই তা স্থগিত করা হয়।
শনিবার সকালেই যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আমরা আগেই প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলাম। ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাদেরকে উসকানি দিলে এর ভয়াবহ পরিণাম ভোগ করতে হবে। অনতিবিলম্বে বিনা শর্তে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করুন এবং ফুল কোর্ট মিটিং বন্ধ করুন’