:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
পদত্যাগ করেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। শনিবার (১০ আগস্ট) বেলা আড়াইটার পর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। আপিল বিভাগের বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগপত্র আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে এসেছে। আমরা সেটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেব। তবে অন্যান্য বিচারপতির পদত্যাগের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র আইন মন্ত্রণালয়ে এসেছে। এটি যথাযথ পদক্ষেপের জন্য দ্রুত রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেব। আশা করব, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ হবে।
এর আগে অপর এক ভিডিও বার্তায় আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা শান্ত হোন। আদালতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি রয়েছে। এগুলোর ক্ষতি হলে জাতির অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
এদিকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতিও। আজকের মধ্যে তারা সবাই রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন বলে আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
পদত্যাগ করতে যাওয়া আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতি হলেন- বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।
এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিয়োগ পাচ্ছেন হাইকোর্ট বিভাগের ৭ বিচারপতি। তালিকায় রয়েছেন- বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ, বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান, জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান, বিচারপতি সৈয়দ মো. জিয়াউল কবির, বিচারপতি শেখ আব্দুল আওয়াল ও বিচারপতি মামনুন রহমান।
প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পদত্যাগ দাবিতে আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। বেলা দেড়টার দিকে জানা যায়, প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বেলা দুইটার দিকে আন্দোলনকারীরা হাইকোর্ট এলাকা ছেড়ে চলে যান।
এর আগে বেলা ১১টা থেকে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ কানায় কানায় ভরে যায়।
সন্ধ্যার মধ্যে পদত্যাগ করবেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান— এমন তথ্য জানানোর পর হাইকোর্ট এলাকা থেকে আন্দোলনকারী সবাইকে সরে যেতে অনুরোধ করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
শনিবার (১০ আগস্ট) দুপুর ১টা ১৫ মিনিটের পর থেকে সবাইকে সরে যেতে অনুরোধ করেন তারা।
এসময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাইকে বলেন, আপনারা সুষ্ঠু বিচারের জন্যই এ আন্দোলন করছেন। প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন। আপনারা এখন এ জায়গা থেকে সরে যান। এতো ভিড়ের মধ্যে যেকোনো অঘটন ঘটাতে পারে। তাতে বিচারশালা ক্ষতিগ্রস্ত হবে ও আপনাদের আন্দোলন বাধাগ্রস্ত হবে। আপনারা সরে যান।
শনিবার (১০ আগস্ট) বেলা ১১টায় হাইকোর্ট চত্বরে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এ আল্টিমেটাম দেন। এ সময় শত শত শিক্ষার্থী হাইকোর্টের ভিতরে ঢুকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন— ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’; ‘দফা এক দাবি এক, বিচারপতির পদত্যাগ’; ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’; ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’; ‘শেখ হাসিনার দালালি, চলবে না চলবে না’।
তিনি বলেন, ঢাকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীসহ আপামর জনতাকে আহ্বান করা হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব আপনারা প্রতিটি এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে হাইকোর্টের দিকে আসুন। হাইকোর্ট ঘেরাও করা হবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একত্র হয়ে মিছিল বের করুন। দেশের প্রতিটি জেলাকোর্ট, জজকোর্ট ও বিচারপতিদের বাসভবন ঘেরাও করা হবে। আজ ফ্যাসিবাদী বিচারব্যবস্থাকে আজ সমূলে উৎখাত করবে গোটা বাংলাদেশ। দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সমিতির নামে যেই ফ্যাসিবাদের মদদপুষ্ট শিক্ষক উইং রয়েছে তা আজ ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে, সকল সিন্ডিকেটকে আজকেই ভেঙে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ঢাকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীসহ আপামর জনতাকে আহ্বান করা হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব আপনারা প্রতিটি এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে হাইকোর্টের দিকে আসুন। হাইকোর্ট ঘেরাও করা হবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একত্র হয়ে মিছিল বের করুন। দেশের প্রতিটি জেলাকোর্ট, জজকোর্ট ও বিচারপতিদের বাসভবন ঘেরাও করা হবে। আজ ফ্যাসিবাদী বিচারব্যবস্থাকে আজ সমূলে উৎখাত করবে গোটা বাংলাদেশ। দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সমিতির নামে যেই ফ্যাসিবাদের মদদপুষ্ট শিক্ষক উইং রয়েছে তা আজ ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে, সকল সিন্ডিকেটকে আজকেই ভেঙে দেওয়া হবে।
হাসনাত বলেন, ছাত্র-জনতার যে গণবিপ্লব সংঘটিত হয়েছে সেটাকে বিতর্কিত করার নানা প্রচেষ্টা চলছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ক্যু করার প্রচেষ্টা দেখেছি। মিলিটারি ক্যু, এডমিনিস্ট্রেটিভ ক্যু এবং আজকে জুডিশিয়ারি ক্যু করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। আমরা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ চেয়ে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম, সেই বিচারপতি অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়ে এক ধরনের ডিজিটাল ক্যু করার চেষ্টা করেছেন। ছাত্র-জনতা এই প্রচেষ্টাকে শক্ত হাতে প্রতিহত করবে।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সরকারের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা না করে ফুল কোর্ট মিটিং ডাকায় হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বিচারপতিদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি আলোচনা করতে সকাল সাড়ে ১০টায় ফুলকোর্ট সভা ডেকেছিলেন প্রধান বিচারপতি। পরে ১০টার মধ্যেই তা স্থগিত করা হয়।
শনিবার সকালেই যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আমরা আগেই প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলাম। ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাদেরকে উসকানি দিলে এর ভয়াবহ পরিণাম ভোগ করতে হবে। অনতিবিলম্বে বিনা শর্তে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করুন এবং ফুল কোর্ট মিটিং বন্ধ করুন’