:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন -এর কর্মসূচি চলাকালে গত ১৬ জুলাই রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় দোকান কর্মচারী শাহজাহান আলীকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় আসামিদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। শাহজাহান আলীকে হত্যার অভিযোগে তার মা আয়শা বেগম (৪৫) একটি মামলা করেন। হত্যার ঘটনায় ইন্ধনদাতা হিসেবে গ্রেফতার দেখানো হয় আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানকে।
বুধবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়।
এ সময় আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের বিচার চেয়ে ঢাকার সিএমএম আদালত চত্বরে আইনজীবীরা মিছিল করেন। আদালতে সেনা ও বিজিবি সদস্যরা অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশের প্রিজন ভ্যানের সামনে চড়ে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে দেখা যায় আইনজীবীদের। এরপর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের আদালতের গারদখানায় রাখা হয়। বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে প্রিজনভ্যানটি ভেতরে ঢোকাতে বেশ বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। প্রিজনভ্যান লক্ষ্য করে এসময় ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
ঢাকা আইনজীবী সমিতি ও ঢাকা বার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, আজকে হাজার হাজার আইনজীবী এখানে বিক্ষোভ করছে। তারা আসামিদের ফাঁসির দাবি করেছেন। আসামিপক্ষের কোনো আইনজীবী এখানে উপস্থিত নেই। এটাই প্রমাণ করে তারা আইনের শাসনে বিশ্বাসী ছিলেন না।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সদরঘাট থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেফতার করে। এরপর রাতেই তাদের ডিএমপির ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মাইনুল হাসান মঙ্গলবার জানিয়েছেন, ঢাকার নিউমার্কেট থানায় করা একটি মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
এ মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগী শাহজাহান আলী নিউমার্কেট থানার মিরপুর রোডের বলাকা সিনেমা হলের গলির মুখে পাপোশের দোকানে কাজ করত। প্রতিদিনের ন্যায় গত ১৬ জুলাই সকাল ৯টার দিকে দোকানে কাজ করার জন্য আসে। ওইদিন সন্ধ্যায় অজ্ঞাতনামা একজন মামলার বাদীকে মোবাইল ফোন দিয়ে জানায়, শাহজাহান আলী গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য শাহজাহানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে ছেলের মরদেহ শনাক্ত করেন তিনি। তখন কোটাবিরোধী অজ্ঞাতনামারা অতর্কিতভাবে নিউমার্কেট থানাধীন মিরপুর রোডের টিচার্স ট্রেনিং কলেজের বিপরীত পাশে কাদের মার্কেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর শাহজাহান আলীকে আক্রমণ করে। অজ্ঞাতনামা আসামিরা তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে তিনি রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। পরে উপস্থিত পথচারীরা তাকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত ধানমন্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় অবস্থা খারাপ দেখে পপুলার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গত ১৬ জুলাই সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা ৫ মিনিটের দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর মূলত মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মগোপনে চলে যান।
আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের কাছে ৯ পাসপোর্ট
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছ থেকে ৯টি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে।
এর মধ্যে আনিসুল হকের কাছ থেকে তিনটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয় এবং সালমান এফ (ফজলুর) রহমানের কাছ থেকে ছয়টি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়। আনিসুল হকের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় লাল রঙের তিনটি কূটনৈতিক পাসপোর্ট। আর সালমান এফ রহমানের কাছ থেকে উদ্ধার করা পাসপোর্টের মধ্যে লাল রঙের কূটনৈতিক পাসপোর্ট একটি এবং সবুজ রঙের পাঁচটি পাসপোর্ট।
নিউমার্কেট থানার উপপরির্দক লিয়াকত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ ছাড়া গ্রেপ্তারকালে আনিসুল হককে তল্লাশি করে ঘিয়ে রঙের ব্যাগে রক্ষিত বিভিন্ন দেশের মুদ্রা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৫৯২ মার্কিন ডলার এবং ৭২৬ সিঙ্গাপুরি ডলার ছিল।
সালমান এফ রহমানের ব্যাগ তল্লাশি করে পাওয়া যায় ১২ হাজার ৬২৪ মার্কিন ডলার, ৬২০ সুইচ ফ্রাঙ্ক, ৮ হাজার ৫০০ ইউএই দিরহাম, ১৩ লাখ উজবেকিস্তানি সোম, ১১ হাজার ৬৫০ সৌদি রিয়াল, ৭৭৯ সিঙ্গাপুরি ডলার, ১৫০ ব্রিটিশ পাউন্ড, ১ হাজার ৩২১ ইউরো, ৫০ হাজার টাকা, ৬ হাজার ২৩০ ভুটানের মুদ্রা, ২ হাজার ভারতীয় রুপি এবং ৩ হাজার ২২০ থাইল্যান্ডের বাথ।