সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনি গ্রেফতার

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি গ্রেফতার হয়েছেন। সোমবার (১৯ আগস্ট) রাত আটটায় রাজধানীর বারিধারা ডিওএইচএস এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসা তাকে আটক করা হয়।

ডা. দীপু মনিকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ওবায়দুর রহমান।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দীপু মনিকে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। চাঁদপুরের একটি এবং মোহাম্মদপুর থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

গত ১৮ জুলাই চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক -এর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলায় সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও তার বড় ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপুকে আসামি করা হয়েছে।

গত ১৫ আগস্ট এই মামলাটি দায়ের করেন চাঁদপুর পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও শহরের বাগাদী রোড হাওলাদার বাড়ির বাসিন্দা কালু হাওলাদারের ছেলে আ. রাজ্জাক হাওলাদার।

মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, গত ১৮ জুলাই রাত ৮টায় সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও তার বড় ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপুর প্রত্যক্ষ নির্দেশে জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের জেএম সেনগুপ্ত রোডের মনিরা ভবন নামে বাড়িতে ১০০০ থেকে ১২০০ লোক দলবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা, ভাঙচুর করে। পরে তারা ওই ভবনে আগুন দিয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়।

সোমবার দীপু মনি, তার স্বামী তৌফিক নাওয়াজ এবং বড় ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপুর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়ে অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্র ও শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন।

ডা. দীপু মনি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন। ২০০৮ সালে চাঁদপুর-৩ আসন থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দীপু মনি তার ঘনঘন বিদেশ সফরের কারণে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সমালোচিত হয়েছেন। কিছু সংবাদের প্রতিবেদন অনুসারে, তিনি সাড়ে চার বছরে ১৮৭ বার বিদেশ সফর এবং ৬০০ দিন বিদেশ অবস্থান করেছেন। জবাবে, তিনি বলেছিলেন—তিনি প্রতিবারই প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতে বিদেশে গেছেন, যিনি প্রতিটি সফরের ভালো-মন্দ বিবেচনা করে তাকে অনুমোদন দিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ৩৬টিসহ ১১৪টি বিদেশি সফর করেছেন এবং দাবি করেছেন, তার দ্বিপক্ষীয় সফরের সংখ্যা ১৭টি নয়—৬২টি ছিল।

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে দীপু মনির পরিবারের সদস্যদের প্রস্তাবিত জমির দাম কয়েকগুণ বেশি দেখিয়ে ৩৫৯ কোটি টাকা বাড়তি আদায়ে কারসাজির অভিযোগে তিনি সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচিত হন। তবে ডা. দীপু মনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ডা. দীপু মনির বাবা এম এ ওয়াদুদ একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা আন্দোলন কর্মী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। মা রহিমা ওয়াদুদ ছিলেন শিক্ষিকা। তাদের দুই ভাইবোনের মধ্যে একমাত্র ভাই জে আর ওয়াদুদ টিপু চিকিৎসক।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তৌফিক নাওয়াজ দীপু মনির স্বামী। তিনি আন্তর্জাতিক একটি ল’ফার্মের প্রধান। উপমহাদেশের দুই হাজার বছরের ঐতিহ্য মণ্ডিত ধ্রুপদী সংগীতের উৎস হিসেবে পরিচিত ‘আলাপ’-এর একজন শিল্পী তিনি। তাদের দুই সন্তান রয়েছেন। তাদের নাম—তওকীর রাশাদ নাওয়াজ ও তানি দীপাবলী নাওয়াজ।

শেখ হাসিনা সরকারের কোনো মন্ত্রীকে গ্রেফতারের খবর প্রথম আসে ১৩ আগস্ট। সেদিন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতারের কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ। পরে তাদের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ঢাকা কলেজের সামনে সংঘর্ষে এক হকার নিহত হওয়ার ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় করা হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

এরপর ১৪ আগস্ট সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু; সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহ্‌মেদ পলক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে পল্টন থানার মামলায় গ্রেফতারের খবর জানায় ডিএমপি। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় এই তিনজনকে গ্রেফতার  করা হয়।

১৬ আগস্ট গ্রেফতার হন সেনাবাহিনী থেকে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। তিনি সর্বশেষ টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক ছিলেন। তাকেও নিউমার্কেট থানার ওই হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

১৬ আগস্ট রাতেই ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়ি থেকে সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনকে আটক করে পুলিশ। তাকেও একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *