:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলে র্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা তদন্তে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়েছে।
কমিটির সদস্যরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
কমিটিকে আগামী ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সই করা এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সময়ে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সিআইডি, বিশেষ শাখা (এসবি), গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্ট গার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্য কর্তৃক জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাদের শনাক্ত করা ও কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিল তা নির্ধারণ করবে এই তদন্ত কমিশন।
কমিশন ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬ অনুসারে তদন্ত কমিশন জোরপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনাগুলোর বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করবে এবং এ বিষয়ে সুপারিশ করবে।
জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া গেলে তাদের আত্মীয়-স্বজনকে অবহিত করবে কমিশন। এ ছাড়া গুমের ঘটনা সম্পর্কে অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত তদন্তের তথ্য সংগ্রহ করবে এটি।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিশনকে সাচিবিক দায়িত্ব প্রদান করবে এবং কমিশনের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করবে।
কমিশনকে সহায়তার জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত যেকোনো ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করতে পারবে।
কমিশনের সভাপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোটের আপিল বিভাগের একজন বিচারক এবং কমিশনের সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারকের মর্যাদা ও অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন সময় সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলীয় নেতা ও সরকারের সমালোচকদের গুম করতে গুরু করে।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আলোচিত ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পেয়েছেন বেশ কয়েকজন, যারা তাদেরকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গুম করে কয়েক বছর ধরে আটকে রাখার অভিযোগ করেছেন।
আলোচিত বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলম এক দশকেরও বেশি সময় আগে গুম হলেও, তাদের সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি।
গত সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল প্রত্যেকটি গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত শাসনামলে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৬৯৯ জন। এ সময়ে গুম হন ৬৭৭ জন, কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন ১ হাজার ৪৮ জন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এ দেড় দশকে ৬৭৭ জন গুমের শিকার হন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৮ জন গুমের শিকার হন ২০১৮ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর। এছাড়া ২০০৯ সালে তিনজন, ২০১০ সালে ১৯, ২০১১ সালে ৩২, ২০১২ সালে ২৬, ২০১৩ সালে ৫৪, ২০১৪ সালে ৩৯, ২০১৫ সালে ৬৭, ২০১৬ সালে ৯০, ২০১৭ সালে ৮৮, ২০১৯ সালে ৩৪, ২০২০ সালে ৩১, ২০২১ সালে ২৩, ২০২২ সালে ২১ ও ২০২৩ সালে ৫২ জন গুমের শিকার হন।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্যমতে, ২০০৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশে গুমের শিকার হয়েছেন ২৫৫ জন। অন্যদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৬০ জন গুমের শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৯২ জন এখনো নিখোঁজ। তাদের মধ্যে যেমন বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন শিক্ষার্থী কিংবা ব্যবসায়ী; যারা মূলত তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন।