:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০১টি। সবগুলো মামলাই হয়েছে জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড নিয়ে।
জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে আগস্টের ৫ তারিখ পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ২১ দিনে ১ হাজারেরও বেশি মানুষ হাসিনা সরকারের হাতে নিহত হয়েছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম হত্যা মামলা করা হয় ১৩ আগস্ট ঢাকায়। আর শততম মামলাটি করা হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। আর ১০১তম মামলা হয়েছে শুক্রবার (৩০ আগস্ট) মুন্সীগঞ্জ শহরের সুপারমার্কেট চত্বরে কৃষি নুর মহম্মদ সরদার ডিপজল হত্যা মামলায়।
এ সব মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী, সচিব, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিককেও আসামি করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা হত্যা মামলাগুলোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গণহত্যার অভিযোগে আটটি মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় জমা পড়েছে। আর ৯৪টি মামলা করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন থানায়। সব মিলিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১০১টি হত্যা মামলা করার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অপহরণ করে গুমের অভিযোগেও একটি মামলা করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
দেশের বিভিন্ন থানায় করা হত্যা মামলাগুলোর মধ্যে ১৩ আগস্ট একটি, ১৪ আগস্ট একটি, ১৫ আগস্ট তিনটি, ১৬ আগস্ট দুটি, ১৭ আগস্ট তিনটি, ১৮ আগস্ট আটটি, ১৯ আগস্ট চারটি, ২০ আগস্ট ১০টি, ২১ আগস্ট ১০টি, ২২ আগস্ট ১০টি, ২৩ আগস্ট ১৪টি, ২৫ আগস্ট বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দুটি ছাড়াও ১০টি, ২৬ আগস্ট একটি, ২৭ আগস্ট চারটি, ২৮ আগস্ট চারটি, ২৯ আগস্ট ছয়টি মামলা এবং সর্বশেষ ৩০ আগস্ট একটি মামলা করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গতকাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ৫ আগস্ট রাজধানীর শ্যামলীর রিং রোডে নিহত হয় মিরপুরের বিসিআইসি কলেজের শিক্ষার্থী নাসিব হাসান (১৭)। তার বাবা গোলাম রাজ্জাকের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম গতকাল অভিযোগটি করেন।
এতে সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, ২৯ সাংবাদিক, দুজন অধ্যাপকসহ মোট ৫৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর খিলগাঁও থানার গোড়ানে গত ৩১ জুলাই দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শ্রমিক দলনেতা হাসান মাহমুদ নিহত হওয়ার ঘটনায় গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নিহতের স্ত্রী ফাতেমা বেগম।
এ ছাড়া রাজধানীর সূত্রাপুরে গত ১৯ জুলাই বিকেলে নাদিমুল ইসলাম এলেম (২৫) নিহত হওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৮৮ জনের বিরুদ্ধে গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালতে মামলা করেছেন নিহতের মা কিসমত আরা। মামলায় আসাদুজ্জামান খান, আনিসুল হক, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, সাঈদ খোকন, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকার সাবেক পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হিরুর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
গাজীপুরের শ্রীপুরে ৫ আগস্ট বিকেলে বিজিবির সদস্যদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের সময় গুলিতে ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় গত বুধবার রাতে শ্রীপুর মডেল থানায় দুটি হত্যা মামলা করেছেন দুই নিহতের স্বজন। দুই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমসহ ৯৫ জনের নামোল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ১০০ জনকে।
খুলনায় ২০২২ সালের ২২ অক্টোবর বিএনপির কর্মী শেখ সাজ্জাদুজামান জিকোকে হত্যার অভিযোগে গতকাল দুপুরে ফুলতলা থানায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন খুলনা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী। এ মামলায় আসাদুজ্জামান খান, শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলালউদ্দিন, সেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, শেখ সোহেল, শেখ রুবেল, শেখ বেলালউদ্দিন, খুলনা সিটির সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি বাবুল রানা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত কুমার অধিকারীসহ ৮৫ জনের নামোল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৪০০ জনকে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৩৬ দিন ধরে চলা আন্দোলন সরকার পতনের দাবি-আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পড়ে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ওইদিন শেখ হাসিনা সরকার প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।