বিএনপি নেতার মাধ্যমে সরানো হলো এস আলমের গাড়ি

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পারের মইজ্জারটেক এলাকায় অবস্থিত এস আলম গ্রুপের শিল্পাঞ্চলের গুদাম থেকে অন্তত ১৪টি দামি গাড়ি ও জিপ রাতের আঁধারে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হকের তত্ত্বাবধানে এসব গাড়ি সরানো হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

কর্ণফুলী থানা এলাকার বাসিন্দা এক প্রত্যক্ষদর্শী নাগরিক নিউজকে বলেন, রাত ১টার পর মইজ্জারটেক এলাকায় অবস্থিত এস আলম কোল্ড রোল স্টিল কারখানার ভেতর থেকে গাড়িগুলো বের করা হয়। এর মধ্যে মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ গাড়িও রয়েছে। গাড়িগুলো বের হওয়ার পর দ্রুত নতুন ব্রিজ পার হয়ে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার হয়ে চলে যায়। কয়েকজন এসব গাড়ির পিছু নিলেও দ্রুত চালানোর কারণে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। গাড়ি বের হওয়ার সময় তারা কারখানার সামনে এনাম, মামুন মিয়া এবং আবু সুফিয়ানের গাড়িচালক পিপলুকে দেখতে পান। ভিডিও ফুটেজে তাদের ছবি দেখা যায়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় মীর গ্রুপের একটি কারখানায় প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী পরিচয়ে এবং পরে ছাত্রদলের পরিচয়ে ১০ কোটি টাকা চাঁদা দাবির একটি অভিযোগ পান। মীর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালামের কাছে এমন অভিযোগ পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যান। আবদুস সালাম এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম মাসুদ -এর বেয়াই। সালামের মেয়েকে বিয়ে করেছেন সাইফুল আলম মাসুদের ছেলে। আবার এনামুল হক এনাম ও আবদুস সালাম মামাতো-ফুপাতো ভাই। এনাম বলেন, দলীয় লোকজন চাঁদা দাবি করছে, এমন অভিযোগ পেয়ে তিনি সরাসরি ঘটনাস্থলে যান। যেহেতু কালুরঘাট শিল্প এলাকাটি আবু সুফিয়ানের নির্বাচনি এলাকায় পড়েছে, তাই সুফিয়ানকেও তিনি খবর দেন। এস আলমের সম্পদ এখন সবার জন্য বিষ। তাই তাদের গাড়ি সরিয়ে নেওয়া বা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। ভিডিও ফুটেজটি কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকার। মইজ্জারটেকের এস আলম কারখানার নয় বলেও দাবি করেন তিনি। মীর গ্রুপের এমডির কাছে ১০ কোটি টাকা চাঁদা দাবির বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। 

বিএনপি নেতার মাধ্যমে সরানো হলো এস আলমের গাড়ি

পটিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পরিচ্ছন্ন বিএনপি নেতা এনামুল হক এনামকে বিপদে ফেলানোর জন্য মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। চাঁদাবাজির খবর পেয়ে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে তা ঠেকাতে গিয়েছিলেন কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায়, মইজ্জারটেকে নয়। এ বিষয়ে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।’

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটিয়া আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন এনামুল হক এনাম। তার বাড়িও পটিয়া এবং এস আলম গ্রুপের সঙ্গে দূরসম্পর্কের আত্মীয়তা রয়েছে বলে দাবি করেন এনাম। এ সময় ঘটনাস্থলে কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মিয়াও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী গ্রুপের শিল্পকারখানায় আগুন দেওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কারখানার মালিকদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এস আলম গ্রুপের একজন কর্মকর্তা বলেন, মূলত ওই ধরনের আতঙ্ক থেকে গাড়িগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, গাড়িগুলোতে নগদ টাকা থাকায় গভীর রাতে অতি গোপনে সেগুলো বের করা হয়।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *