ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘আসনা’

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘আসনা’ ধেয়ে আসছে উপকূলে। ঘূর্ণিঝড়টি পাকিস্তান নাকি ভারতে আঘাত তা নিয়ে চলছে আলোচনা।

ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) জানিয়েছে, গভীর নিম্নচাপটি শক্তি সঞ্চয় করে ইতোমধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। কচ্ছ ও সংলগ্ন পাকিস্তানের উপকূলবর্তী এলাকায় অবস্থান করছে। ক্রমে উত্তর-পূর্ব আরব সাগরের পশ্চিম দিকে সরে যাচ্ছে। পাকিস্তানের করাচির দিকে অগ্রসর হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়টি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঝড়টি ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। 

শনিবার আইএমডির সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে গুজরাটের নালিয়া শহরের পশ্চিম উপকূল থেকে ২৫০ কিলোমিটার, পাকিস্তানের করাচির উপকূল থেকে ১৬০ কিলোমিটার এবং বেলুচিস্তানের পাসনি উপকূল থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। বর্তমানে ঘণ্টায় ১৪ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘আসনা’।

কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারতীয় উপকূল থেকে দূরে সরে যাবে ‘আসনা’। তবে নিম্নচাপের কারণে গত কয়েক দিন ধরে গুজরাটে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। লাগাতার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। ঘূর্ণিঝড়টি পাকিস্তানের দিকে অগ্রসর হলেও গুজরাটের ওপর থেকে শিগগিরই দুর্যোগের শঙ্কা কাটছে না। আগামী দু’দিন রাজ্যটির উপকূলবর্তী এলাকায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

পাকিস্তানের নাম দেয়া ঘূর্ণিঝড় ‘আসনা’। গত আট দশকে মাত্র চারবার এমন ধরনের ঘূর্ণিঝড় দেখা গেছে। কারণ, নিম্নচাপ সাধারণত তৈরি হয় সমুদ্রে। পরে তা শক্তি বৃদ্ধি করে গভীর নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে আছড়ে পড়ে উপকূলে। কিন্তু আসনার ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে স্থলে এবং এই নিম্নচাপ থেকে তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে সমুদ্রে।

এদিকে অতি বৃষ্টির প্রভাবে গত চার দিনে গুজরাতে বন্যা পরিস্থিতির জেরে মৃতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৩৬। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ‘আসনা’র প্রভাবে গুজরাটের জামনগর, সুরাট, পোরবন্দর, মোরবি, স্বর্কা এবং কুচ জেলায় গত বুধবার রাত থেকে শুরু হয়েছে ভারি বর্ষণ। অতি বর্ষণের জেরে এসব জেলার অনেক এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে।

তবে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে কচ্ছ জেলায়। আইএমডির জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ রামাশ্রয় যাদব এনডিটিভিকে বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় কচ্ছ জেলাায় ৮৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি। এছাড়া সুরাট এবং কুচ জেলাতেও গত ২৪ ঘণ্টায় ভারি বর্ষণ হয়েছে।’

ভারতের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বর্ষার মৌসুমে এই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় বিরল। সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর শক্তিশালী প্রতিরোধের জন্য নিম্নচাপগুলো ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে পারে না।

পাকিস্তান আবহাওয়া বিভাগের (পিএমডি) মহাপরিচালক মেহের সাহেবজাদা খান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় আসনা করাচি-গোয়াদার উপকূলে তৈরি হয়েছে। যার ফলে পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার পর ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।

পিএমডির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিন্ধের প্রাদেশিক সরকারকে ঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে বলেছে। সিন্ধের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক বর্ষণ হচ্ছে বলেও জানা গেছে। বর্ষণের কারণে ঝড় আসার আগেই সিন্ধের কয়েকটি স্থানে আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে তারা।

প্রসঙ্গত, ১৮৯১-২০২৩ সালের মধ্যে আরব সাগরে মোট তিনটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল। তবে আগস্ট মাসে আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় একটি বিরল ঘটনা।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *