:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সফল করার লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ৫৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
ঘোষিত কমিটিতে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের ৩ জনকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
সংগঠনের পক্ষে কমিটি ঘোষণা করেন আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য। সংগঠনের সদস্য সচিব হিসেবে গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আখতার হোসেন ও মুখপাত্র হিসেবে রয়েছেন সামান্তা শারমিন।
লিখিত বক্তব্যে মুখপাত্র সামান্তা বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে কাজ শুরু করছে। অচিরেই সকল মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে আমরা আলোচনা করবো। তৃণমূল পর্যন্ত এ কমিটির বিস্তৃতি ঘটানোর মাধ্যমে আমরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাব।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আটটি লক্ষ্য:
১। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা।
২। ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা।
৩। রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা ও জবাবদিহিতার পরিসর তৈরি করা।
৪। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের সাথে আলোচনা, মত বিনিময় ও গণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনতাকে সংহত করার লক্ষ্যে কাজ করা।
৫। দেশের সর্বস্তরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে সংহত করে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত করে রাখার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা।
৬।বিজ্ঞাপনজনস্বার্থের পক্ষে নীতি নির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা।
৭। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণী প্রস্তাবনা তৈরি ও সেটা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৮। গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য গণআলোচনার আয়োজন করা।
জাতীয় নাগরিক কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- আরিফুল ইসলাম আদীব, সাইফ মোস্তাফিজ, মনিরা শারমিন, নাহিদা সারোয়ার চৌধুরি, সারোয়ার তুষার, মুতাসিম বিল্লাহ, আশরাফ উদ্দিন মাহদি, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, অনিক রায়, জাবেদ রাসিন, মো. নিজাম উদ্দিন, সাবহানাজ রশীদ দিয়া, প্রাঞ্জল কস্তা, মঈনুল ইসলাম তুহিন, আব্দুল্লাহ আল আমিন, হুযাইফা ইবনে ওমর, শ্রবণা শফিক দীপ্তি, সায়ক চাকমা, সানজিদা রহমান তুলি, আবু রায়হান খান, মাহমুদা আলম মিতু, অলিক মৃ, সাগুফতা বুশরা মিশমা, সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজ, তাসনিম জারা, মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া, মো. আজহার উদ্দিন অনিক, মো. মেসবাহ কামাল, আতাউল্লাহ, এস. এম. শাহরিয়ার, মানজুর-আল- মতিন, প্রীতম দাশ, তাজনূভা জাবীন, অর্পিতা শ্যামা দেব, মাজহারুল ইসলাম ফকির, সালেহ উদ্দিন সিফাত, মুশফিক উস সালেহীন, তাহসীন রিয়াজ, হাসান আলী খান, মো. আব্দুল আহাদ, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, মশিউর রহমান, আতিক মুজাহিদ, আবদুল্ল্যাহ আল মামুন ফয়সাল, মো. ফারহাদ আলম ভূঁইয়া, তানজিল মাহমুদ, এস.এম. সুজা, মো. আরিফুর রাহমান, ছাত্রদলের সাবেক নেত্রী কানেতা ইয়া লাম লাম, সৈয়দা আক্তার, স্বর্ণা আক্তার, সালমান মুহাম্মাদ মুক্তাদির, আকরাম হুসেইন।
নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচার থেকে মুক্তি পেয়েছে। একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতেই আজকের এই নাগরিক কমিটি আত্মপ্রকাশ করেছে। পুনরায় স্বৈরাচারী শক্তি যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, এই কমিটি ছাত্র-জনতার সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সে লক্ষ্যে কাজ করে যাবে। সারা দেশ থেকে আগ্রহীরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। আমরা ইতোমধ্যে একটি গুগল ফর্ম ছেড়েছি। সামনের দিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে আমরা সরাসরি কথা বলে কমিটি গঠন করব।
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে স্বৈরাচার বিলোপ করতে এই কমিটি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। দেশ-বিদেশি চক্রান্ত আমরা ছাত্র-নাগরিক সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করবে। আমরা এসব কাজে সকল সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার সহযোগিতা কামনা করছি। আপনারা বুদ্ধি ও পরামর্শ দিয়ে তরুণদের সাহায্য করবেন। তরুণ সমাজ এই দেশকে সুন্দরভাবে পুনর্গঠন করবে।
আহ্বায়ক জানান, এটি কোনো রাজনৈতিক দল হিসেবে নয় বরং ছাত্র-জনতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার জন্য এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
কমিটি ঘোষণা শেষে নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, এটি একটি বর্ধমান কমিটি। আমরা অতিদ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করব। এই কমিটিকে আমরা গ্রাম পর্যন্ত নিয়ে যাব। আমরা তরুণ প্রজন্ম এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি রয়েছে, তা রাষ্ট্র বিনির্মাণে বিনিয়োগ করব। গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটকে সংহত করতে এবং চলমান দেশি-বিদেশি চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জারি রাখতে এই কমিটি কাজ করবে। একইসাথে বাংলাদেশের পুনর্গঠনে কিছু সংস্কার ও বিনির্মাণের কাজ করবে এই কমিটি।
রাজনৈতিক দল গঠন করা হবে কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা কোনো ব্যক্তি বা দলীয় এজেন্ডাকে সামনে রাখছি না। আমরা পুরো বাংলাদেশকে সামনে রাখছি। তরুণদের একটা প্লাটফর্ম গঠন করব। যেখানে বাংলাদেশের প্রশ্নে সবাই এক থাকবে। একটা হলো রাষ্ট্র এবং রাজনৈতিক দল হলো তার একটি অংশ মাত্র। আমরা রাষ্ট্র পুনর্গঠন করব। রাষ্ট্রের অধীনে অনেক প্রতিষ্ঠান থাকে। প্রত্যেকটা খাতে তরুণদের ঐক্যবদ্ধ করব। সেখানে যদি কোনো দলের পুনর্গঠনের প্রয়োজন হয়, তা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি ১৯৭১ সালের পর নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হয়েছে, ১৯৯০ সালে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হয়েছে, কিন্তু সেগুলো ব্যর্থ হয়েছে। তাই ২০২৪ সালে এসে আমাদেরকে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে হবে।