:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা এলাকায় ছয় দফা দাবিতে কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। প্রায় ৬ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ছয়টার পর শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে যান।
এ বিষয়ে পুলিশের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গাজী শামীমুর রহমান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস পেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন। এর পর থেকে এ রাস্তা দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন -এর ব্যানারে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। এ তথ্য জানিয়েছেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী শামীমুর রহমান।
তিনি বলেন, অবরোধের কারণে সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। যারা অবরোধ করেছেন, তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
সড়ক অবরোধ করায় আজ দুপুর ১২টা থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ফার্মগেট থেকে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তা প্রায় পুরোটাই যানজটে স্থবির হয়ে ছিল।
বেলা সোয়া তিনটার দিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়ক ছাড়েননি। যানজটও কমেনি। ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট -এর শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল বলেন, দাবি পূরণে সরকারের আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা সড়ক ছাড়বেন না।
সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভের কারণে হাতিরঝিল, রামপুরা, মগবাজার, শান্তিনগর, রাজারবাগ, কাকরাইল ও মিন্টু রোড এলাকায়ও তীব্র যানজট দেখা গেছে। এসব এলাকায় শত শত গাড়ি আটকা পড়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তবে শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্স দেখলেই ছেড়ে দিচ্ছেন।
ডিএমপি তেজগাঁও জোনের সরকারি কমিশনার (ট্রাফিক) স্নেহ শীষ বলেন, শিক্ষার্থীদের হঠাৎ রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলনে এইসব এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তাদেরকে বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার জন্য বলা হলেও তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার তানিয়া সুলতানা বলেন, কারিগরি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে বিজয়সরণি উড়ালসড়কে গাড়ি চলতে দেওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য এলাকায় যানজট হয়েছে।
কারিগরি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনরতদের ছয় দফা হলো
• ২০২১ সালের বিতর্কিত নিয়োগপ্রাপ্ত সব ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং সব প্রতিষ্ঠান থেকে দ্রুত অপসারণ করতে হবে।
• ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স ৪ বছর মেয়াদী করতে হবে এবং প্রতি সেমিস্টার পূর্ণ মেয়াদের ৬ মাস করতে হবে।
• উপসহকারী প্রকৌশলী পদে (দশম গ্রেড) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া অন্য কেউ আবেদন করতে পারবে না এবং উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান পদ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে।
• কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত কোনো জনবল থাকতে পারবে না।
• কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করতে হবে।
• ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে হবে।
বিক্ষোভকালে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিনিধি আল ইমরান বলেন, “আমরা যেহেতু উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, আমাদেরকে ইন্সট্রাকটর পদে দশম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়া হোক। অথচ তারা (বিতর্কিত নিয়োগপ্রাপ্ত সব ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদ) টেকনিক্যাল বিষয় কিছু জানে না। তারা এ বিষয়ে শিক্ষিতই না। এসব ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের আমরা ইন্সটিটিউটে রাখতে পারি না।”
ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মো. আশরাফুল বলেন, সরকারি চাকরিসহ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই সোচ্চার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছেন। তাঁদের দাবিগুলো নিয়ে তাঁরা সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। কিন্তু তাঁদের দাবি মানার বিষয়ে কোনো আশ্বাস পাননি। এ কারণে তাঁরা বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস না পেলে তাঁরা সড়ক ছেড়ে যাবেন না।