■ গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি ■
গোপালগঞ্জে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর গাড়িবহরে আওয়ামী লীগের হামলায় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার নিহত হয়েছেন। হামলায় এসএম জিলানীসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া অন্তত ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৫টায় সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা সড়কের পাশে থাকা গাছের ডাল ভেঙে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে পিছু হটে যায় তারা। কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা মাইকিং করে সংগঠিত হয়ে আবারও হামলা চালিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে এসএম জিলানীসহ অন্তত ৩৫ জনকে রক্তাক্ত জখম করে। পরে দিদারের মৃত্যু হলে দিদারের লাশ অজ্ঞাত স্থানে রাখে এবং পরে রাত সাতটার দিকে ঢাকা খুলনা মহাসড়কের চরপাথালিয়া নামক স্থানে ফেলে রেখে যায়।
সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিকদার শহিদুল ইসলাম লেলিন জানান, ঘোনাপাড়া মোড়ে গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিন মোল্লা, গোবরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিকরুল ফকির, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলিমুজ্জামান ও হাসান মোল্লার নেতৃত্ব হামলা করা হয়।
সিকদার শহিদুল ইসলাম লেলিন আরও বলেন, আমরা বেদগ্রামের মোড়ে শান্তিপূর্ণ পথসভা শেষ করে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর বাবা-মায়ের কবর জিয়ারতের উদ্দেশে টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলাম। ঘোনাপাড়া মোড়ে পৌঁছলে গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১৫ নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিন মোল্লা, গোবরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিকরুল ফকির, স্থানীয় আওয়ামী নেতা আলিমুজ্জামান ও হাসান মোল্লার নেতৃত্বে গাড়িবহরে হামলা করা হয়।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আনিচুর রহমান হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আহতদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্না, রাজু বিশ্বাস, মাহাবুব খান মুরাদ, লিন্টু মন্সী, গোপালগঞ্জের সালমান সিকদার, সুজন সিকদার, সবুজ সিকদার, ঢাকার মতিঝিল এলাকার নাসির আহমেদ মোল্লা, বাদশা মোল্লা, নিশান, হাসান, মাতুয়াইলের আলাউদ্দিনসহ ১৬ জনকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও তিনজনকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অন্যরা স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীসহ কয়েকজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান বলেন, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে সদর উপজেলার বেদগ্রাম মোড়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির একটি পথসভা শেষে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে তারা রওনা হন। সদর উপজেলার ঘোনাপাড়ায় পৌঁছলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২০০ থেকে ৩০০ নেতাকর্মী মাইকিং করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর ও নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হন।
গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়া এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা আলিমুজ্জামান বলেন, বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা গাড়িবহর নিয়ে যাওয়ার সময় ঘোনাপাড়া এলাকায় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। তাদের বাধা দিলে আমাদের ওপর হামলা করেন। এতে আমি নিজেই আহত হয়েছি।
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, বিকাল সাড়ে ৫টায় আহতাবস্থায় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী ও তার স্ত্রী রওশন আরা রত্নাসহ ১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। এদের অধিকাংশের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেশীয় অস্ত্রের কোপ রয়েছে। তাদের সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান বলেন, বেদগ্রাম মোড়ে বিএনপির একটি পথসভা শেষ করে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হন। ঘোনাপাড়ায় পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের দুই থেকে তিন শ নেতা-কর্মী দেশি অস্ত্র নিয়ে সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের ওপর অতর্কিতে হামলা করেন। এতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মী আহত হন।
বিএনপি নেতাদের ওপর হামলা, চক্রান্তের বহি:প্রকাশ
গোপালগঞ্জে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর গাড়ি বহরে আওয়ামী লীগের হামলা ঘটনা ঘটেছে। এতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলি দিদারসহ দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, হামলাকারীরা নেতাকর্মীদের বহনকারী গাড়িবহরেও হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। হিংস্র সন্ত্রাসীদের কতৃর্ক এ ধরনের পৈশাচিক ও কাপুরুষোচিত রক্তাক্ত ঘটনা এটি।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও দেশে এখনও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে পরাজিত শক্তির দোসররা। তারা গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। অবৈধ আওয়ামী শাসনামলে এই সন্ত্রাসীরা অনেক কালো টাকা উপার্জন করেছে, সেই কালো টাকা তারা এখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কাজে লাগাচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীরা ছাত্র—জনতার ঐতিহাসিক বিজয়কে মেনে নিতে পারছে না বলেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর জন্যই বিএনপি এবং অন্যান্য সমমনা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ জনগণের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে খুন ও তাদেরকে গুরুতর জখম করা হচ্ছে।
তিনি বলেন আজ গোপালগঞ্জে দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা এস এম জিলানীর গাড়িবহরে বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মো. শওকত আলী দিদারকে খুন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী সহ অনেক নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করার ঘটনা একটি গভীর দেশী—বিদেশি চক্রান্তের বহি:প্রকাশ। এসব সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমন করার কোনো বিকল্প নেই। হামলা ও রক্তাক্ত পথ অনুসরণ করে ষড়যন্ত্রকারীরা যাতে ফায়দা হাসিল করতে না পারে সেজন্য ছাত্র—জনতাসহ সকল গণতন্ত্রমণা মানুষকে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে এখনও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে হবে। আর তাহলেই দেশ থেকে ষড়যন্ত্রকারী ও দুষ্কৃতিকারীদের মূলোৎপাটনসহ দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা, প্রকৃত গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে এস এম জিলানীর গাড়িবহরে পৈশাচিক হামলা চালিয়ে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মো. শওকত আলী দিদারকে খুন এবং এস এম জিলানী ও তার সহধর্মিনীসহ নেতৃবৃন্দের ওপর হামলাকারী দুষ্কৃতিকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর আহ্বান জানান। তিনি নিহতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জ্ঞাপন এবং আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেন।