■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন পেল জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলন। দলটির প্রতীক দেওয়া হয়েছে মাথাল। দলটির নিবন্ধন নং-০৫৩।
মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসি সচিব শফিউল আজিম, জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের কাছে দলটির নিবন্ধন সনদ হস্তান্তর করেন।
নিবন্ধনের বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘গণসংহতি আন্দোলন রাজনৈতিক দল হিসেবে আবেদন করেছিল ২০১৭ সালে। এরপর আগের কমিশন আপিল না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই অনুমোদন আগের কমিশন করে গেছে। আমরা তা ফলো করেছি মাত্র।’
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশন সচিব শফিউল আজিমের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে ইসি জানায়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং- ১৩৮০৫/২০১৮ এর বিগত ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল প্রদত্ত রায় ও আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ‘দ্য রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার, ১৯৭২ চ্যাপ্টার ৬এ- এর বিধান অনুযায়ী প্রধান কার্যালয় ৩০৬-৩০৭ রোজ ভিউ প্লাজা, ১৮৫ বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, হাতিরপুল, ঢাকা ১২০৫ এ অবস্থিত গণসংহতি আন্দোলনকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত করেছে। এই দলের জন্য ‘মাথাল’ প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং এর নিবন্ধন নং-০৫৩।
দলের নিবন্ধন পাওয়ার পর জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সচিব আজ আমাদের কাছে নিবন্ধন সনদ হস্তান্তর করেছেন। দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর ধরে আমরা বিগত সরকারের একটা নিবর্তনের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছি। ২০১৭ সালে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করি। সব শর্ত পূরণ করলেও ইসি থেকে বলা হয় আমাদের গঠনতন্ত্রে অঙ্গ সংগঠন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য নেই। অঙ্গ সংগঠন যে থাকতে পারবে না, তা গঠনতন্ত্র উল্লেখ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরে আমরা দলের বর্ধিত সভা ডেকে গঠনতন্ত্রে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে ইসিতে জমা দিয়েছি। কিন্তু ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে আমাদের চিঠি দিয়ে জানানো হলো যে-আমাদের নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু কেন দেওয়া হচ্ছে না, তার কারণ চিঠিতে উল্লেখ করা ছিল না।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা আদালতে গেলে ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল রায় পাই যে-গণসংহতি আন্দোলনকে নিবন্ধন দিতে হবে। নিবন্ধন দেওয়া হয়নি এটা অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রায়ের লিখিত কপি পাওয়ার ৩০ দিনের (৩০ জুন) মধ্যে ইসিকে নিবন্ধন দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপর ছয় বছর কেটে গেলেও ইসি দেয়নি। আমরা বারবার ইসিতে যোগাযোগ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যে নিবর্তনমূলক ছিল দলগুলোর ওপর, তারা যেভাবে ফ্যাসিস্ট কায়দায় জনগণের অধিকারকে হরণ করতে চেয়েছে, একই কায়দায় রাজনৈতিক দলও যাতে বিকশিত হতে না পারে, সে জন্য নানাভাবে সংকুচিত করে রাখার অংশ হিসেবেই নিবর্তনমূলকভাবে গণসংহতির নিবন্ধন আটকে রেখেছিল। নিবন্ধন নেই এই অজুহাতে নানাভাবে জেলায় জেলায় আমাদের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হয়েছে। এইভাবে তারা চাপে রেখেছিল।’
সাকি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ মান্য করা হচ্ছে না, এই রকম দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনও আবার আদালতের দ্বারস্থ হলেন। তবে আপিল চালাতে আগ্রহী কি না, সরকার পতনের পর ইসির কাছে জানতে চাইলে, তারা আপিল প্রত্যাহার করে নেয়। এভাবে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মাথাল প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছি। প্রতীক ইসির আইনের মধ্য থেকে বাছাই করতে হয়েছে। আমরা মনে করি-এই আইনগুলো পরিবর্তন করা দরকার। পুরো নিবন্ধন বিধিমালাই পরিবর্তন করা দরকার। কারণ দল নিবন্ধনের যে আইন ও বিধি তৈরি করা হয়েছে, তা জনগণের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে, রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার অধিকার ক্ষুণ্ন করে। ফলে নিবন্ধন আইন পরিবর্তন করে সহজ করে তোলা এবং প্রতীক অবারিত করা, যেন দল তার পছন্দসই প্রতীক বাছাই করতে পারে। আমরা ইতিমধ্যে এ দাবি জানিয়েছি।’