কালোত্তমা
চলে যাওয়ার নিকশ কালো পথটা ধরে হেঁটে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি ইস্টিশনের নাল দেউড়িতে,
হাতে জ্বলন্ত শলাকার ধোঁয়া গুলো বাতলে দিচ্ছে বাতাসের পথ;
উত্তুরে হাওয়া,তোমার খুব পছন্দের ছিলো,আমারো।
ঈষৎ কোঁকড়ানো চুল গুলো এ হাওয়ায় মাতাল হতো
আমার নাকে বইয়ে নিয়ে আসতো তোমার ঘ্রাণ,
এ নচ্ছার নাক দিয়েই ঘুচে যেত তোমাকে স্পর্শের পূর্ণ ব্যবধান!
ইঁচড়ে অনুভূতির ভুতগুলো সে ঘ্রাণে নেচে নেচে উঠতো মাথায়
আমার সমস্ত শরীরে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রজাপতিরা দৌড়ঝাপ করতো
এ মাথা হতে ও মাথা, ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকেই যেন কেঁপে উঠতাম আমি;
এ যে কি অনুভতি তোমাকে আমি বোঝাতে পারবোনা কালোত্তমা।
আজ আবার আরেকবার এ হাওয়ায় দাঁড়িয়ে কেবল নিয়ন আলোটাকেই
বড্ড বেশি পরিচিত আর আপন মনে হচ্ছে।
আঁধার, হাওয়া, নাকে ল্যাপ্টে থাকা তোমার ঘ্রাণেদের ভুত
অদ্ভুতুড়ে অনুভুতিদের যন্ত্রণাকর পৌনঃপুনিকতা তৈরী করছে,
রিক্ত করে দিচ্ছে বাকি সব, জীবনটাকে একদম অল্প না পাওয়াদের বৃত্তে বন্দি করছে এমনভাবে;
যেন আর কখনোই কিছু পাই নি, আর কোন অস্তিত্বে হয় নি আমার প্রশ্বাস!
কালোত্তমা, চাইনি কখনো তুমি অইখানে যাও,
নক্ষত্রের ফুলকিতে ফুটো হওয়া আকাশে
আমি চাইনি করতে তোমার নূরের খোঁজ;
আমি চাইনি তোমার প্রেমের পিঠ জুড়ে খেলা করুক ঘাস।
আমি চাইনি আকাশের ওপারের আকাশ,
বাতাসের ওপারের বাতাস!
______________________________
নিমন্ত্রণ
জীবন বড্ড ছোট,এখানে সময় কোথা সময় নষ্ট করবার?
তোমাতে হারিয়ে যাওয়ার সাধ আমার শত জন্মেও মিটবেনা!
অথচ দেখো, তোমাতে হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে দেখেই
দুই গন্ডা বসন্ত পেরিয়ে গেলো, কতগুলো ক্যালেন্ডার জঞ্জাল হলো!
সময় যেনো রকেটের পিঠে চেপে বসে নিয়েছে তীব্র গতি,
আমাকে পুড়িয়ে আগুনের হল্কা ছড়িয়ে ছুটছে পাগলা ঘোড়ার মতন;
আর আমি, তোমার আশায় দাঁড়িয়ে থেকে নিজেরও পিছনে পড়ে গেছি,
জীবন পোড়া নরকে হাসতে হাসতে পৌনঃপুনিক পান করে গেছি বিষের পেয়ালা!
একদিন সব থাকবে; তুমি আমি,গোছানো ঝুল বারান্দা, সুবিশাল লন,
কিন্তু সময় থাকবে না; তোমাতে লীন হওয়ার ইচ্ছে থাকবে,
কিন্তু ভাঁজ পড়া চামড়ার নিচে ধুকতে থাকা হৃদপিণ্ডে জোয়ার থাকবে না,
আমার হাতের মুঠোয় তোমার হাত থাকবে কিন্তু আফসোস মিটবে না।
একদিন চোখের সামনে পাহাড় থাকবে, পাহাড় চূড়া থেকে সমুদ্রে ডুবে যাওয়া সূর্য্যি থাকবে,
কিন্তু চুপসে যাওয়া ফুসুফুসে সে পাহাড় চড়ার দম থাকবে না।
একদিন নদী থাকবে, বাসার সামনে নদী ঘাটে পানসি থাকবে,
নদীতে উত্তুঙ্গ ঢেউ থাকবে কিন্তু বুড়ো হাড়ে বৈঠা বাওয়ার বল থাকবে না।
আমাদের হাতে ভালোবাসার তুলনায় সময় বড্ড কম পাগলী,
পাগল মনে তোকে নিয়ে পাগলামী তো মরনের পরেও মাটি হবে না;
কিন্তু পাগলামো করার যে শরীর সেতো ক্ষণস্থায়ী আর বড্ড ভঙ্গুর,
চলে আয় এ জীবন শুকিয়ে যাওয়ার আগেই চল বৃষ্টি ঝরাবো ভালোবাসার।
অভিমান, ঝগড়া, রাগ-দুঃখ ক্ষোভের হিসেব নিকেশ, দেনা পাওনা,
সব না হয় কষবো আমরা দাঁত হারিয়ে, এখন এসব ফ্যাসাদ ফর্দ পড়ে থাকুক ধুলোর পরে;
আয় হে সখা এখুনি ছুটে সময় গতির পাগলা ঘোড়ার পিঠে চেপে জলদি করে,
আয় হে সখা সময় পুড়াই দুজন মিলে চারটি চোখের দুঃখ শুষে।
______________________________
শ্যাওলা
অসহ্য শূন্যতায় একা চাঁদটার মত ধার করা আলো নিয়ে
পৃথিবীর চারদিকে প্রদক্ষিণ করে যাওয়া জীবনে
কলঙ্কের আর কিবা দাম থাকে, সে কলঙ্ক ফিকে;
মড়কের গলিতে ইঁদুর নাচে আর ঝোলে চামচিকে!
একা চাঁদ ঘেরা থাকে তারা দিয়ে তবু থাকে দূরে,
এক আকাশে জুড়ে থেকে তারারাও রোজ যায় সরে;
রিক্সাতে ভাঙ্গা পথে লেপ্টানো তোর-আমার বাহু
এক পথে গিলে খায় দুটি মন ভিন্ন দু রাহু!
পাশাপাশি শুয়ে থাকা দেহ দুটি ঢুকেও ঢোকেনা ভেতর,
লীন হওয়া ও শরীর বোঝে নাতো এ শরীর কি শোকে কাতর;
পাশে থাকা শ্বাস নেয়া দেহ দুটি দুটি পাশ বালিশ
ডুবে গেছে কেউ কভু শোনেনিকো বোঝেনি নালিশ!
দিনে তবু ঢেকে থাকে আলোর হিজাব মেখে দূরে থাকে পাথুরে শশী,
পেঁচা পিঠে নিশি এসে জাপটে ধরলে শেষে আড়াল সে যায় যে খসি,
বাড়ির পিছন ঘাটে পুকুরেতে জমে গেছে অনেক বর্ষা ঝরা জল;
ধুইনা সে জলে মুখ, ফেলিনা তাতে চোখ, ঘাট জুড়ে শ্যাওলা পিছল!
______________________________
বিদায়
এমনই কোন এক ঝড়ে
ধুয়ে যাবে খেয়ালি জীবন,
কোন এক ঝিরিঝিরি রাতে,
আবছায়া খুঁজবে জীবন।
আছে যত না মেলা হেঁয়ালি
জলে যাবে অবশেষে মিশে;
গোধূলি গোলাপ রাঙা লালি,
লুটাবে তিমিরে গিয়ে শেষে।
বিদায়ে বিদায় দিয়ো মোরে
ঠোঁটে হাসি চোখে জল নিয়ে,
জেনো তব অলস দুপুরে
ছায়ায় মিলবে মোর হিয়ে।
অযতনে জমে যদি ধুলো
ক্ষতি নেই ধুলো পরে যাক;
জীবনের পালাবদলেতে
জেনো, ক্ষত দেবে মোর ডাক!