■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
বায়তুল মোকাররমে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) জুমার বয়ানের সময় হাসিনার পতনের পর পলাতক আওয়ামী খতিব মুফতি রুহুল আমিনের পেছনে নামাজ না পড়া নিয়ে বিতর্কের একপর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন মুসল্লি আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
নামাজের আগে বয়ানের সময় কয়েকজন মুসল্লি সাবেক খতিব মুফতি রুহুল আমিনের পেছনে নামাজ পড়তে অনীহা প্রকাশ করেন। এ সময় আরেক দল মুসল্লি প্রতিবাদ করেন। পরে এ নিয়ে দুই পক্ষ পরস্পর হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় নামাজ না পড়িয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন মুফতি রুহুল আমিন।
বায়তুল মোকাররমের বর্তমান খতিব হাফেজ মাওলানা ড. মুফতি ওয়ালিয়ুর রহমান খান বয়ান করছিলেন। এমন সময় পলাতক খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন অনুসারীদের নিয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদে এসে বর্তমান খতিবের মাইক্রোফোনে হাত দেন। এমন সময় বর্তমান খতিবের অনুসারীরা রুহুল আমিনের অনুসারীদের প্রতিরোধ করেন। তখন দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এতে করে মসজিদের সাধারণ মুসল্লিরা বিচলিত হয়ে পড়েন। অনেকে ওই সময় মসজিদ থেকে বেরিয়ে পড়েন। পরে পরিবেশ কিছুটা শান্ত হলে সোয়া ১টার দিকে আবার সাধারণ মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী মুসল্লি হামিদ বলেন, ‘মসজিদের মতো পবিত্র স্থানে এমন হামলার ঘটনা ন্যক্কারজনক।’
নুরুল হক নামে একজন বলেন, আজ স্বাভাবিকভাবে আমরা নামাজে এসেছিলাম। রুহুল আমিনের সন্ত্রাসীরা মসজিদের ভেতরে ভাঙচুর করেছে। রুহুল আমিন জোর করে নামাজ পরাবে, নামাজ পড়াক, কিন্তু মুসল্লিদের ওপর আক্রমণ কেন করল? মসজিদের ভেতরে মুসল্লিদের মেরেছে।
নামাজ পড়তে আসা আরেকজন বলেন, আমি নামাজ পড়তে এসেছিলাম, আমাদের ওপর আক্রমণ করা হয়। মসজিদের ভেতর থেকে কাচ ভাঙা আমাদের ওপর নিক্ষেপ করা হয়।
এ বিষয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ছোট একটা ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট ও পল্টন মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন।’
এদিকে এমন ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত বায়তুল মোকাররম মসজিদে আসেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া আগে থেকেই বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান করছিলেন। মসজিদের সামনের রাস্তায় রাখা হয়েছে একটি প্রিজন ভ্যান। বায়তুল মোকাররম মার্কেটের সামনে রাখা হয়েছে একটি পুলিশের এপিসি কার (অস্ত্রসজ্জিত যান)। পল্টন মোড়ে রয়েছে জলকামান এবং কয়েক শতাধিক পুলিশ।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিন আত্মগোপনে চলে যান। পরে খতিবের দায়িত্ব দেওয়া হয় ওয়ালিউর রহমান খানকে।
মুফতি রুহুল আমিন গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মহাপরিচালক। ২০১৮ সালের নির্বাচনে নড়াইল-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি। দলীয় মনোনয়ন না দিলেও পরে তাকে বায়তুল মোকাররমের খতিব হিসেবে নিয়োগ দেয় আওয়ামী লীগ সরকার।
জাতীয় মসজিদ সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২৬ জুলাই থেকে আর বায়তুল মোকাররমে আসেননি মুফতি রুহুল আমিন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ২৯ আগস্ট তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ। ৪ সেপ্টেম্বর নোটিশের জবাব দেন তিনি। সেখানে ‘অসুস্থ’ আছেন বলে জানান। একইসঙ্গে ১৫ দিনের ছুটির আবেদন করেন। আবেদন অনুসারে মুফতি রুহুল আমিনের ছুটি শেষ হয় ১৯ সেপ্টেম্বর। এরপর আজ ২০ সেপ্টেম্বর বায়তুল মোকাররমে আসেন তিনি। এর আগে সর্বশেষ তিনি খুৎবা পড়িয়েছেন ১৯ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকারের সময়।