■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক তোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৮ ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ফজলুল হক হলের প্রাধ্যক্ষও বদল করা হয়েছে।
এদিকে তোফাজ্জল হত্যার ঘটনায় ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শাহ মো. মাসুমকে সরিয়ে ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস আল-মামুনকে নতুন প্রাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কারের পাশাশাশি অভিযুক্ত ৮ ছাত্রের আবাসিক সিট হল বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
সাময়িক বহিষ্কৃত ও সিট বাতিল হওয়া ওই ৮ শিক্ষার্থীরা হলেন- ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও হল ছাত্রলীগের সাবেক (সদ্য পদত্যাগকারী) উপ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক জালাল মিয়া, হল ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক উপ-সম্পাদক আহসান উল্লাহ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আল হোসাইন সাজ্জাদ, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সুমন মিয়া, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মুত্তাকীন সাকিন শাহ, সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াজিবুল আলম, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ফিরোজ কবির এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আবদুস সামাদ।
এদের মধ্যে ফিরোজ কবির এবং আবদুস সামাদ ছাড়া বাকিদেরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে তারা এ ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ছয় শিক্ষার্থীর সবাই বলেছেন, ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে ছাত্রদের ছয়টি মুঠোফোন ও মানিব্যাগ চুরি হয়েছিল। তোফাজ্জল সেদিন রাত আটটার দিকে হলের ফটক দিয়ে মাঠের ভেতরে যান। তখন কয়েকজন শিক্ষার্থী চোর সন্দেহে তাঁকে আটক করে হলের অতিথিকক্ষে নিয়ে যান। পরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাঁকে স্টাম্প দিয়ে মারধর করা হয়। এরপর তাঁকে হলের ক্যানটিনে নিয়ে রাতের খাবার খাওয়ানো হয়। খাওয়া শেষে আবার তাঁকে হলের অতিথিকক্ষে এনে ব্যাপক মারধর করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
তিন ধাপে ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী তোফাজ্জলকে মারধরে জড়িত। জবানবন্দিতে ওই ছয় শিক্ষার্থী তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবার নাম প্রকাশ করেছেন। আসামিরা বলেন, সেদিন অতিথিকক্ষে মারধরের পর রাত ১২টার দিকে হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক তোফাজ্জলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাঁরা জানতে পারেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তোফাজ্জল মারা গেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তোফাজ্জলকে মারধরের আগে তাকে ভাত খাওয়ানো হয়, তখন তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ভাত খেতে তার কেমন লাগছে।
ভাত খাওয়ানোর পর তাকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি উঠেছে।
তোফাজ্জলকে ধরে মারধর করা হচ্ছে, জানতে পেরে তার মামাতো বোন আসমা আক্তার তানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রের নম্বর ফোন দিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। সে যে মানসিক ভারসাম্যহীন, তা তাদের বলেছিলেন তানিয়া। তবে তারা শোনেননি।
তানিয়ার অভিযোগ, এরপর তাকে আরও বেশি করে মারধর করা হয়।
তোফাজ্জলের স্বজনেরা বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এসেছিলে মরদেহ নিতে। তারা বলছেন, হলের ছাত্ররা তোফাজ্জলের কাছ থেকে নম্বর নিয়ে তাদের ফোন করে তার মুক্তির জন্য টাকা চেয়েছিল। আর তার কেন এত নম্বর মুখস্থ, সেজন্য আরও মারধর করে।
মধ্যরাতে যখন তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয় ততক্ষণে তার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে ছিল মারধরের অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন।