■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
শেখ হাসিনার পতনের পর প্রবাসে প্রায় সাড়ে ৫ বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরেছেন দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। হাসিনার আমলে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ও নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি বিদেশে নির্বাসিত ছিলেন।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা ২০ মিনিটে কাতার এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে তুরস্ক থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছান তিনি।
বিমান বন্দরে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের নেতারা তাকে অভ্যর্থনা জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার নগর সম্পাদক ও বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. আব্দুল্লাহ, আমার দেশের বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী প্রমুখ।
বিমানবন্দরে নেমে টার্মিনাল-২ দিয়ে বের হয়ে একটি মিনি ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেন মাহমুদুর রহমান। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে দৈনিক আমার দেশ পরিবারসহ অন্যান্য সংগঠনের পক্ষ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয় এবং সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
বিমানবন্দরের বাইরে সহাস্রাধিক ছাত্র-জনতা সমবেত হয় মাহমুদুর রহমানকে শুভেচ্ছা জানাতে। তিনি বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে গাড়ি থেকে সবার উদ্দেশে হাতে নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন।
এ সময় পুরো টার্মিনাল লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। শিক্ষক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার কয়েক হাজার লোক মাহমুদুর রহমানকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমান বন্দরে সমবেত হয়।
বিমানবন্দরের বাইরে সহস্রাধিক ছাত্র-জনতার উদ্দেশে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘একসময় বাংলাদেশের যে তরুণ কিউবার বিপ্লবের নায়ক চে গুয়েভারাকে বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করত, সেই বাংলাদেশের তরুণ এখন আবু সাঈদকে তাদের আদর্শ হিসেবে জানে।’
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনাকে যারা উৎখাত করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। শহিদদের আমরা কখনো ভুলব না। আজ থেকে ২০০ বছর পরও আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ যারা এ আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের তিতুমীরের মতো স্মরণ করবে মানুষ। তাদের ভুলে যাওয়া কখনো সম্ভব না।
বিমানবন্দর ছাড়ার আগে মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। হাসিনা বিদেশে বসে বিদেশি বন্ধুদের দিয়ে বিপ্লবকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র করছেন জানিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
বিপ্লবী ছাত্র-জনতার কাছে আহ্বান রেখে মাহমুদুর রহমান বলেন, ছোটখাটো কারণে অনৈক্য সৃষ্টি করবেন না। এই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। যার ফলে ছয় বছর নির্বাসনে থাকার পর আমি মাতৃভূমিতে ফিরতে পেরেছি। আমাকে উদ্ভট ও মিথ্যা মামলায় সাত বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। আমার নামে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট আছে। এমনও হতে পারে আমাকে জেলে যেতে হতে পারে। আপনারা বিচলিত হবেন না। আমি আইনিভাবে সবকিছু মোকাবিলা করব।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট মাহমুদুর রহমান বলেন, আমি আমার মতো করে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আপনারা আমাকে আমার মতো করে লড়াই করতে দিন। বিগত ১৬ বছর ধরে আমরা এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দল তাদের মতো করে লড়াই করেছে। আর আমি আমার দেশ পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে আমার মতো করে লড়াই করেছি। আপনাদের সঙ্গে এই বিষয়ে আমি দীর্ঘ আলোচনা করতে পারছি না। জেল থেকে মুক্ত হওয়ার পরে আরও বড় পরিসরে আপনাদের সাথে দেখা হবে। আপনাদের সাথে সেদিন আমি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ভারতীয় আগ্রাসন নিয়ে আলোচনা করব।
“আমার লড়াই ছিল বুদ্ধিবৃত্তির লড়াই, আমার লড়াই ছিল কালচারের লড়াই।”
এ সময় আমার দেশ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী বলেন, “মাহমুদুর রহমান ভাই দেশে ফিরেছেন। উনার মা খুব অসুস্থ, তাকে দেখতে উনি হাসপাতালে যাবেন।”
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সারাদেশে ১২৪টি মামলা দায়ের করা হয়। একটি মামলায় মাহমুদুর রহমান ও তার স্ত্রী ফিরোজা মাহমুদকে ৭ বছর কারাদণ্ড দেয় আদালত।
জ্বালানী খাতে শেখ হাসিনার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় ও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় প্রথম দফায় ২০১০ সালের জুন মাসে এবং দ্বিতীয় দফায় শাহবাগের ফ্যাসিবাদী গণজাগরণ মঞ্চের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের এপ্রিলে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ এবং তার সম্পাদিত আমার দেশ পত্রিকাও বন্ধ করে দেয়া হয়।