■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৫৭ মিনিটে হিজবুল্লাহ প্রধানকে হত্যার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বৈরুতে নাসরুল্লাহর অবস্থানকে লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। শনিবার সকাল পর্যন্ত এ হামলা অব্যাহত ছিল।
নাসরুল্লাহর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে দেওয়া বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ বলেছে, “প্রতিরোধের মাস্টার, ধর্মনিষ্ঠ বান্দা তার সৃষ্টিকর্তার কাছে যেতে একজন শহীদ হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছেন।”
“সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ, হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল, যোগ দিয়েছেন তার সেরা, অমর সহযোগীদের সঙ্গে। যাদের তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর একের পর এক জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “আমরা আমাদের সহমর্মিতা এবং শুভেচ্ছা জানাচ্ছি তার সাথের শহীদদের, যারা তার সঙ্গে এই পবিত্র পথে যাত্রা করেছে বৈরুতে বিশ্বাসঘাতক ইহুদিবাদীদের হামলায়।”
হিজবুল্লাহ আরও জানিয়েছে, যদিও তাদের প্রধান নেতা নিহত হয়েছেন তা সত্ত্বেও গাজা ও ফিলিস্তিনিদের সহযোগিতায় লেবাননের প্রতিরক্ষায় শত্রুদের বিরুদ্ধে তাদের জিহাদ অব্যাহত থাকবে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরও দাবি করেছে, হাসান নাসরুল্লাহ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা এ হামলায় নিহত হয়েছেন।
আইডিএফ জানিয়েছে, তাদের যুদ্ধবিমান হিজবুল্লাহর কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। আর এ সদর দপ্তরটি বৈরুতের দাহিয়েহ এলাকায় একটি আবাসিক ভবনের নিচে মাটির নিচে অবস্থিত ছিল।
শনিবার আইডিএফের প্রধান হারজি হালেভি সামাজিক মাধ্যম এক্সের এক ভিডিও বিবৃতিতে বলেছে, ‘হাসান নাসরুল্লাহ আর বিশ্বকে আতঙ্কিত করতে পারবেন না।’
যারা ইসরায়েলি নাগরিকদের হুমকি দিচ্ছে তাদেরকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘বার্তাটি খুব পরিষ্কার। যারা ইসরায়েলি নাগরিকদের হুমকি দিচ্ছে তাদের কাছে কীভাবে পৌঁছাতে হবে তা আমরা জানি।’
নিজেদের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডলে আইডিএফ লিখেছে, ‘হাসান নাসরুল্লাহ সন্ত্রাসী হামলা করে আর বিশ্বকে আতঙ্কিত করতে পারবেন না’।
হাসান নাসরুল্লাহ গত ৩২ বছর ধরে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর নেতা। তিনি বৈরুতে শুক্রবারে ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিলেন বলে জানা গেছে।
তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘোষণার বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি হিজবুল্লাহ।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েল হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যা করেছে। কিন্তু গোষ্ঠীটির শীর্ষব্যক্তি নাসরুল্লাহকে হত্যা করা ইসরায়েলের জন্য বিরাট সাফল্য হিসেবে ভাবা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও বিশ্লেষণ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলেছে, অঞ্চলটি বৈরুতের দক্ষিণের দাহিয়েহ শহরতলি। ইসরায়েলি হামলার পর সেখান থেকে একাধিক বড় ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা গেছে। এলাকাটিতে হিজবুল্লাহর শক্তিশালী উপস্থিতি আছে। এ ছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায় গোষ্ঠীটির অনেক শীর্ষ নেতাই বসবাস করেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচে আদ্রাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী…সন্ত্রাসী সংগঠন হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে নির্মূল করেছে।’ বিবৃতিতে তিনি আরও দাবি করেন, ‘হিজবুল্লাহর আরেক শীর্ষ নেতা আলী কারাকিও এই হামলায় নিহত হয়েছেন।’ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক পৃথক পোস্টে বলেছে, ‘হাসান নাসরুল্লাহ আর বিশ্বকে সন্ত্রাসবাদের হুমকি দিতে সক্ষম হবেন না।’
আরবি ভাষায় পোস্ট করা আদ্রাইয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল হিজবুল্লাহর ভূগর্ভস্থ সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছে। সেই সময়টাতে গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব ইসরায়েলের নাগরিকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিচালনার বিষয়ে সমন্বয় সাধন করছিল।’
নাসরুল্লাহ নেতৃত্বে বিগত কয়েক দশকে হিজবুল্লাহ একটি আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয়। যেটি মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে তেহরানের প্রভাবকে বাড়িয়ে তুলেছিল। তাঁর মৃত্যু কেবল হিজবুল্লাহর জন্যই নয়, ইরানের জন্যও একটি বড় ধাক্কা হবে। কারণ, ১৯৮২ সালে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠা করেছিল।
গতকাল শুক্রবার হিজবুল্লাহর কমান্ড সেন্টারে হামলার পর আজ শনিবারও ইসরায়েল বৈরুতে বিমান হামলা চালিয়েছে। যা গোষ্ঠীটির সঙ্গে ইসরায়েলের ব্যাপক সংঘাতের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।