■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একদিনে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা চলতি বছর একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে গত ১৮ ও ২২ সেপ্টেম্বর ডেঙ্গু আক্রান্ত একদিনে সর্বোচ্চ ৬ জন করে মারা গিয়েছিল।
এর ফলে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ১৫০ জনে দাঁড়াল। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১০৫ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়।
শনিবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৮৬০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৫৬৫ জনে।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত ১৫০ জনের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৮২ জন, উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে ২০ জন এবং ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বরিশালে ১৫ জন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় একজন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ জন, খুলনা বিভাগে পাঁচজন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়। এ বছর সিলেট বিভাগের কোনো হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়নি।
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩৮৭, ঢাকা বিভাগে ৯৮, ময়মনসিংহে ৩২, চট্টগ্রামে ১৬৪, খুলনায় ৫৩, রংপুর বিভাগে ১৭, বরিশালে ১০১, সিলেট বিভাগে ৬ ও রাজশাহী বিভাগে দু’জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৩ হাজার ১৭৪ রোগী। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ১ হাজার ৬৩৩ জন। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৪১। এ বছর ভর্তি রোগীর মধ্যে ১৫ হাজার ৯৫৯ জন ঢাকার বাইরের। ঢাকার দুই মহানগর এলাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১২ হাজার ৬০৬ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, চলতি মাসে বছরের আগের যে কোনো মাসের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এ সময় মৃত্যুও হয়েছে বেশি। ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ১৫ হাজার ৭২৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে; মৃত্যু হয়েছে ৬৭ জনের।
সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা। চলতি বছর এই বয়সীদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ৩২২। আর মারা যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ৩৪।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে ৬২ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ ও ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ নারী।
২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭০৫ জন।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৮৬৮ জনের। এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৮ জন। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১ হাজার ৭০৫ জন। ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ মারা গিয়েছিল, শুধু ২০২৩ সালেই তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে।
দেশের প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়।
২০০০ সালের পরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু ধীরে ধীরে কমে এলেও ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ভয়াবহ পরিস্থিতি অতিক্রম করে দেশ। ২০১৯ সালে ১ লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।
২০২০ সালে করোনার প্রকোপের মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম ছিল। ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে মারা যায় ৭ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।
ঢাকার তুলনায় এর বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল দ্বিগুণের বেশি। সারা দেশের মৃত্যুর ৫৮ শতাংশই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের।