■ কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ■
কুড়িগ্রামে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা, গঙ্গাধর ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।
রোববার সকাল নয়টায় কুড়িগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, ১২ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি সমতলে ৩২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও ধরলা নদীর পানি তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ৬২ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ২ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গতিয়াশাম, খিতাবখাঁ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সরিষাবাড়ী ও মাঝেরচর, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বুড়িরহাট বিভিন্ন গ্রামে তিস্তার ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। উজানের ঢলের প্রবল স্রোতে গতিয়াশাম কমিউনিটি ক্লিনিক, খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কালিরহাট এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের রামনিয়াশা, জুয়ানসতরার চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গো চারণভূমি ও ফসলের খেত তলিয়ে গেছে।
ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস প্রামাণিক বলেন, গতিয়াশাম কমিউনিটি ক্লিনিক এলাকাসহ তিস্তার চরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে অন্তত পাঁচ শ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গতকাল বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পানিবন্দীদের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণের প্রস্তুতি চলছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, তিস্তার নদীভাঙন এলাকা গতকাল তিনি পরিদর্শন করেছেন। উজানের ঢলে বন্যার্ত পরিবারকে সহায়তা দিতে ত্রাণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গতিয়াশাম কমিউনিটি ক্লিনিক এলাকার ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকা তিস্তার পানিতে জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ওই দুই ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক পরিবারের প্রায় দেড় হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুর্গত পরিবারগুলোর মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
শনিবার রাতভর তিন্তার পানি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের ৫ ও ৮ নং ওয়ার্ডের হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। আরও ভাটিতে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের বেশ কিছু বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। তিস্তার বাম তীরের চেয়ে ডান তীরে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা বেশি। ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়ক ও ফসলি জমি। বাজারের দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনায় পানি প্রবেশ করেছে। কিছু স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝের চর, সরিষাবাড়ি এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বড় দরগা, স্লুইচগেট, চর খিতাবখাঁ, মাঝের চর ও বুড়িরহাটের নদী তীরবর্তী শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে এসব পরিবারের নারী, শিশু ও গবাদিপশু। যুবে গেছে সবজি ও আমন ক্ষেত।
ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মামুন বলেন, ‘এলাকায় হাজারো মানুষ পানিবন্দি। রাস্তাঘাট সব পানির নিচে। মানুষের জমির ফসলও তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি না নামলে এলাকায় হাহাকার শুরু হবে।’
৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাড়িতে পানি। নিচু এলাকার শতাধিক বাড়িঘরে পানি ঢুকছে। রাত পোহাতে পোহাতে আরও বাড়িঘরে পানি ঢুকতে পারে।’
৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের আড়াইশর বেশি পরিবার পানিবন্দি। রবিবার দুপুরের পর থেকে হু হু করে পানি বাড়তেছে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। বেশিরভাগ পরিবারের ঘরবাড়িতে কোমর সমান উচ্চতায় পানি। শনিবার দুপুর থেকে এসব পরিবারে চুলা জ্বলছে না। মানুষের ফসলি জমি পানিতে তলায় গেছে।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘উপজেলার দুই ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের মাঝে সরকারিভাবে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ২ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকে তা বিতরণ করা হবে।’