■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিন পেয়েছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সাজার বিরুদ্ধে আপিল করে জামিন চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ ও শেখ শাকিল আহম্মেদ রিপন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমিন জানান, মাহমুদুর রহমানকে দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আজ আপিল করা হবে। সেইসঙ্গে তার জামিন চাওয়া হবে।
তিনি বলেন, আপিল আবেদন গৃহীত হওয়া সাপেক্ষে আমরা আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। যদি আদালত আপিল আবেদন গ্রহণ করে শুনানির জন্য বৃহস্পতিবারই ধার্য করেন তাহলে সেই দিনই তার জামিন চাওয়া হবে। আদালত তার জামিন মঞ্জুর করলে কারামুক্ত হতে আর কোনো আইনগত বাধা থাকবে না।
২৯ সেপ্টেম্বর রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আত্মসমর্পণ করেন মাহমুদুর রহমান। এ সময় অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে তিনি আপিল শর্তে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) আসাদুজ্জামান নুর -এর আদালত সাংবাদিক শফিক রেহমান ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচ জনের সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যে কোনো সময় থেকে এপর্যন্ত বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার আসামিরা একত্রিত হয়ে ‘যোগসাজশে’ প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। ওই ঘটনায় ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করেন। ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এ মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এই মামলায় ঢাকার আদালতে ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
এদিকে গত ২২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কারা-২ শাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে একই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত সাংবাদিক শফিক রেহমান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়ার সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে তুরস্ক থেকে দেশে ফিরেন মাহমুদুর রহমান। দেশে ফিরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই আমলে আমার ৫ মাস কারাগারে থাকতে আপত্তি নেই। হ্যাঁ আমার বয়স হয়েছে, আমি বুড়ো হয়ে গেছি। কিন্তু জেলে থাকার মতো মানসিক এবং শারীরিক শক্তি এখনও আমার আছে। কাজেই আপনারা এটা নিয়ে একদম বিচলিত হবেন না। একদম উদ্বিগ্ন হবেন না। আইনকে তার রাস্তায় যেতে দিন। আমাকে আমার মতো করে লড়াই করতে দিন। আমি আমার মতো করে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আপনারা আমাকে আমার মতো করে লড়াই করতে দিন। বিগত ১৬ বছর ধরে আমরা এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দল তাদের মতো করে লড়াই করেছে। আর আমি আমার দেশ পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে আমার মতো করে লড়াই করেছি। আপনাদের সঙ্গে এই বিষয়ে আমি দীর্ঘ আলোচনা করতে পারছি না। জেল থেকে মুক্ত হওয়ার পরে আরও বড় পরিসরে আপনাদের সাথে দেখা হবে। আপনাদের সাথে সেদিন আমি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ভারতীয় আগ্রাসন নিয়ে আলোচনা করব।আমার লড়াই ছিল বুদ্ধিবৃত্তির লড়াই, আমার লড়াই ছিল কালচারের লড়াই।’
দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিগত সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের বিরুদ্ধে লেখনির কারণে মাহমুদুর রহমানকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নির্মম নির্যাতন করা হয়। তিনি বিগত সরকারের সব অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার ও আপোষহীন ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সারাদেশে ১২৪টি মামলা দায়ের করা হয়। একটি মামলায় মাহমুদুর রহমান ও তার স্ত্রী ফিরোজা মাহমুদকে ৭ বছর কারাদণ্ড দেয় আদালত।
জ্বালানী খাতে শেখ হাসিনার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় ও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় প্রথম দফায় ২০১০ সালের জুন মাসে এবং দ্বিতীয় দফায় শাহবাগের ফ্যাসিবাদী গণজাগরণ মঞ্চের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের এপ্রিলে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ এবং তার সম্পাদিত আমার দেশ পত্রিকাও বন্ধ করে দেয়া হয়।