■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
ঢাকায় এসে মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশি শ্রমিকদের বড় সুসংবাদ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। টিকিট জটিলতার কারণে প্রথম পর্যায়ে যে ১৮ হাজার শ্রমিক যেতে পারেননি তাদের ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে জানান তিনি।
এছাড়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান আনোয়ার ইব্রাহিম। তাকে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৫৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সফররত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত একান্ত বৈঠক করেছেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, ঢাকায় তাঁর পুরোনো বন্ধুকে স্বাগত জানাতে পেরে তিনি ‘খুবই খুশি’।
বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিপ্লব, ছাত্র ও জনগণের আত্মত্যাগ এবং বিগত সরকারের সংঘটিত গণহত্যা নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।
প্রধান উপদেষ্টা মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর নেতাদের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন।
দুই নেতা তাঁদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে একই গাড়িতে চড়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের ভেন্যুতে যান।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে দুই সরকারপ্রধান যৌথ সংবাদ সংবাদ সম্মেলন করেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ওপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে জানিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং সর্বাত্মক সহযোগী থাকবে।
আনোয়ার ইব্রাহিম আরও বলেন, আমাদের দেশে আরও জনশক্তি প্রয়োজন, তবে উভয় দেশের মধ্যে শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সচ্ছতা থাকতে হবে। এছাড়া সেমি কন্ডাক্টর, ডেটা সেন্টার, এআই, নিউ টেকনলোজির বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।
তিনি বলেন, বৈঠকে রাজনৈতিক, মানবিক, বাণিজ্যিক দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে কথা বলেছি।
মালয়েশিয়ায় যেসব কর্মী আছেন তারা কাজ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, তারা আধুনিক দাস নয়। এই বিষয়ে আমরা পরিষ্কার ধারণা রাখি। তবে বিদেশি অনেক শ্রমিকের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ রয়েছে। তাদের বিষয়টা ভিন্ন।
এই দুটো বিষয়কে এক না করার আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমার পুরনো বন্ধু এবং বাংলাদেশের পুরনো বন্ধু আসায় আমি খুবই খুশি। এর ওপর আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর এটা প্রথম কোনো সরকার প্রধানের বাংলাদেশ সফর।
ড. ইউনূস বলেন, আমরা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সম্মত হয়েছি। যেখানে তারুণ্যের শক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছি। সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে।
চতুর্থ ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস আরও বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয় এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনশক্তি রপ্তানি, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো নিয়ে কথা বলেছি। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি এবং ভিসা সহজীকরণ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
এছাড়া আসিয়ান জোটে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে মালয়েশিয়ার সক্রিয় সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তিসংক্রান্ত বিষয় এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনশক্তি রফতানি, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো নিয়ে কথা বলেছি। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি এবং ভিসা সহজীকরণের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশে হাসিনার পতনের পর গত ১৪ আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম খুব দ্রুত বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সে সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানাতে ফোন করে এ ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।
সর্বশেষ ২০১৩ সালের নভেম্বরে সরকারি সফরে ঢাকায় এসেছিলেন মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক।