■ শেরপুর প্রতিনিধি ■
ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতীর মহারশি, নালিতাবাড়ীর ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার শতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বেলা ১১টায় নালিতাবাড়ীর চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২৫ সেন্টিমিটার এবং ভোগাই নদীর পানি ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার সদর উপজেলায় ১৭৭, নালিতাবাড়ীতে ২২৫ এবং নাকুগাঁওয়ে ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ২২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করেছে ঝিনাইগাতী উপজেলা শহরে। এতে প্রধান সড়ক, বাজারের অলিগলি ও অফিসসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডুবে গেছে। আকস্মিক ঢলের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রাতভর বৃষ্টিতে প্লাবিত হয় নিম্নাঞ্চলের প্রায় অর্ধ শতাধিক গ্রাম। এখনো বৃষ্টি চলমান থাকায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।
স্থানীয়রা জানান, শেরপুরের নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর দুই পাড়ের কয়েকটি স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
অপরদিকে শ্রীবরদীর সীমান্তবর্তী ভারত থেকে নেমে আসা সোমেশ্বরী নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে পানিতে ডুবে গেছে শতশত পুকুর, সবজি ও ধানের ক্ষেত। বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে চরম বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তবে এখনও প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের কোনো সহায়তা তারা পাননি বলে জানান বন্যা দুর্গত এলাকার পানিবন্দি বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাতভর প্রবল বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর পানি দুকূল উপচে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উপজেলার সদর বাজারসহ ৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি বেড়ে দুকূল উপচে প্রবাহিত হওয়ায় পৌরসভাসহ ৩টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ দুইটি উপজেলার গ্রামীণ অধিকাংশ রাস্তাঘাট, বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। অনেক বাড়িঘরে হাটু পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ঝিনাইগাতী সদর, ধানশাইল, কাংশা ও নলকুড়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের আংশিক প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চত্বরে ঢলের পানি উঠেছে। বিভিন্ন এলাকায় ৭০০ থেকে ৮০০ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পানিবন্দিদের উদ্ধার করার জন্য কাজ করছে। বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য শুকনো খাবার প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিকালের মধ্যেই আকস্মিক বন্যার পানি কমে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, উপজেলার পোড়াগাঁও, রামচন্দ্রকুড়া ও নয়াবিল ইউনিয়নের ৫/৬টি গ্রামের আকস্মিক বন্যায় খুবই খারাপ আকার ধারণ করেছে। এসব গ্রামের কোথাও কোথাও কোমর ও গলা পরিমান সমান পানি হওয়ায় মানুষজন নিরাপদ আশ্রয় চলে গেছেন। অনেকেই পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শেরপুরে বন্যার চরম অবনতির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ে পিএইচডি গবেষক আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক প্রোফাইলে এক পোস্টে এ আশঙ্কার কথা জানান তিনি।
তিনি লিখেন, আজ সন্ধ্যার মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোর বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতির আশঙ্কা করা যাচ্ছে। ২০২২ সালে সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার মানুষদের মতো রাতের অন্ধকারে বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এই শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলার মানুষদের।
পলাশ লিখেছেন, ময়মনিসংহ বিভাগের জেলাগুলোর উপরে গত ২৪ ঘণ্টা থেকে ভারি থেকে খুবই ভারি বৃষ্টির কারণে ইতোমধ্যে শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলায় পাহাড়ি ঢল ও বন্যা শুরু হয়েছে। চলমান ভারি বৃষ্টি আরও ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকার আশঙ্কা করা যাচ্ছে। বৃষ্টিপাত আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর উপরে ভারি থেকে খুবই ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা করা যাচ্ছে। আজ সন্ধ্যার মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোর বন্যা পরিস্থিতি চরম অবনতির আশঙ্কা করা যাচ্ছে।
পোস্টে তিনি জানান, মেঘালয় পর্বতের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু পর্বতগুলোর মধ্যে একটি হলো চোখপট নামক স্থান। দুর্ভাগ্যক্রমে এই স্থানেই সবচেয়ে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে ও এই স্থানটি হলো শেরপুর জেলার বিপরীতে। ফলে পাহাড়ের এই স্থানে যে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে তা খুব দ্রুত নেমে আসছে শেরপুর জেলার নদীগুলোর মধ্যে পাহাড়ি ঢল আকারে। এ কারণেই পাহাড়ি ঢলের পানিতে ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ার প্রবল ঝুঁকি রয়েছে আজ সারা দিন ও রাতে। শেরপুর জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর দুই উপকূলের মানুষদের দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
সরকারকে আহ্বান জানিয়ে তিনি লিখেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের ময়মনিসংহ ক্যান্টনমেন্টের সেনাবাহিনীকে বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষদের উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।