ভারতীয় শিল্পপতি রতন টাটা মারা গেছেন

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■ 

ভারতের অন্যতম বৃহৎ বহুজাতিক কোম্পানি টাটা সন্সের চেয়ারম্যান ইমেরিটাস রতন টাটা মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন এক বিবৃতিতে রতন টাটার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। গত সোমবার একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে এই শিল্পপতি তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে চাউর হওয়া জল্পনা খারিজ করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, বয়সের কারণে তিনি নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করছেন।

এ বিষয়ে জানতে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাটা গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানানো হয় তারা বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) এ নিয়ে গ্রুপের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেবেন।

রতন টাটার মৃত্যুর খবরে ইতোমধ্যে শোক প্রকাশ করে মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স -এ বার্তা দিয়েছেন হর্ষ গোয়েঙ্কা থেকে শুরু করে গৌতম আদানি, আনন্দ মহিন্দ্রাসহ শিল্পপতিরা। শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রসঙ্গত, শতাধিক বছর আগে টাটা গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন রতনের দাদা। ১৯৯১ সালে সেই গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান হন রতন। তখন মূলত অটোমোবাইল এবং ইস্পাতশিল্প ক্ষেত্রে ছড়িয়ে ছিল টাটা গোষ্ঠীর ব্যবসা। ১৯৯৬ সালে টাটা টেলিসার্ভিস শুরু করেন প্রবীণ শিল্পপতি। ২০০২ সালে শুরু করেন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ‘টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস’। ২০১২ সালে টাটা গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার সরাসরি দায়িত্ব থেকে সরে সাম্মানিক পদে বসেন রতন।

মুম্বাই, শিমলা হয়ে নিউইয়র্কের রিভারডেল কান্ট্রি স্কুলে পড়তে যান রতন টাটা। ১৯৫৯ সালে স্থাপত্য নিয়ে স্নাতকস্তরে ভর্তি হন কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে। সাতের দশকে টাটা গ্রুপে ম্যানেজার পদে দায়িত্ব পান রতন টাটা। ১৯৯১ সালে জেআরডি টাটা দায়িত্ব ছাড়লে রতন টাটাকে নিজের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। প্রথমে তাকে নিয়ে আপত্তি ছিল গ্রুপের ভেতরে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে তার।

১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর মুম্বইয়ে পারসিক পরিবারে জন্ম রতন টাটার। বাবা নভল টাটার জন্ম গুজরাতের সুরতে। পরে টাটা পরিবার তাকে দত্তক নেয়। রতন টাটার মা সুনি টাটা আবার সরাসরিভাবে জামশেদজি টাটার পরিবারের অংশ। রতন টাটার পিতামহ হরমসজি টাটা জন্মসূত্রেই ওই পরিবারের সদস্য। রতন টাটার যখন ১০ বছর বয়স, সেই সময় তার মা-বাবা আলাদা হয়ে যান। রতন টাটার নিজের এক ভাইও রয়েছেন, জিমি টাটা। সৎভাই নোয়েল টাটা। নভল টাটা দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন সিমোন টাটাকে। নোয়েল তাদেরই সন্তান। 

যে ২১ বছর রতন টাটার হাতে টাটা গ্রুপের দায়িত্ব ছিল, তাতে গ্রুপের আয় বেড়ে হয় ৪০ গুণ, মুনাফা বাড়ে ৫০ গুণ। মধ্যবিত্তকে চার চাকার স্বপ্ন দেখান রতন টাটাই। পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা গড়ে ওঠে। যদিও রাজনৈতিক টানাপড়েনে পরে গুজরাতে কারখানা সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়।

৭৫ বছর বয়সে ২০১২ সালে টাটা গ্রুপের নির্বাহী ক্ষমতা ছেড়ে দেন রতন টাটা। সেই জায়গায় পারিবারিক আত্মীয় সাইরাস মিস্ত্রিকে আনা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে সাইরাসকে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ফের অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে ফেরেন রতন টাটা। এরপর ২০১৭ সালে নটরাজন চন্দ্রশেখরণকে অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সমাজসেবামূলক কাজে আরও বেশি করে যুক্ত হন রতন টাটা।

২০০০ সালে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মান পান রতন টাটা। ২০০৮ সালে পান ‘পদ্ম বিভূষণ সম্মান’। মহারাষ্ট্র, আসাম সরকারও তাকে সম্মান প্রদান করে। ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ, লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স, আইআইটি বম্বে, ইয়েল ইউনিভার্সিটি, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, রাজা তৃতীয় চার্লসের থেকেও বিশেষভাবে সম্মানিত হন।

রতন টাটা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি। তবে ২০১১ সালে একটি সাক্ষাৎকারে জীবনে প্রেম এসেছিল বলে স্বীকার করে নেন। চার-চারবার বিয়ের পিঁড়িতে বসার উপক্রম হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক পরিণতি পায়নি বলে জানান।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *