■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে হাইকোর্ট বিভাগে আওয়ামীপন্থি ১২ বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে বিক্ষোভস্থলে গিয়ে এ ঘোষণা দেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা। তার এ ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা হাইকোর্ট এলাকা ছাড়েন।
বিচারপতিদের অপসারণসহ তিন দাবিতে দফায় দফায় আল্টিমেটাম দেয় শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে, সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন আইনজীবীরা। বেলা ৩টার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দুই সমন্বয়কসহ ছয়জন দেখা করেন রেজিস্ট্রার জেনারেলের সঙ্গে। দীর্ঘ আলোচনার পর রেজিস্ট্রার জেনারেল জানান, বিচারপতি অপসারণের মামলা আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আছে। রোববার হবে শুনানি।
সকালে চায়ের আমন্ত্রণ জানানো ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এর আগে, প্রধান বিচারপতির ডাকে সাড়া দিয়ে তার দপ্তরে যান বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান ও বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামান।
এর আগে, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের চায়ের আমন্ত্রণে ডাক পাওয়া আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর এই ১২ জন বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ছুটিতে পাঠানো ওই ১২ জন বিচারপতি হলেন- বিচারপতি নাঈমা হায়দার, বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার, বিচারপতি খিজির হায়াত, বিচারপতি শাহেদ নুরউদ্দিন, বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি মো: আক্তারুজ্জামান, বিচারপতি খন্দকার দিলিরুজ্জামান, বিচারপতি আমিনুল ইসলাম, বিচারপতি এস এম মাছুদ হোসেন দোলন ও বিচারপতি আতাউর রহমান খান।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সুপ্রিম কোর্টে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা অন্তত ৩০ জন বিচারপতির পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন।
তারা প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের কাছে ৩০ জনের নাম ও অভিযোগ সম্বলিত তালিকাও জমা দিয়েছেন।
জানা গেছে, ওই তালিকা থেকেই ১২ জন বিচারপতিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা বলেন, আপনাদের যে দাবি, আপনাদের যে লিডার, তারা আমার চেম্বারে বসেছিলেন। আমরা দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছি। পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলেছি। সঙ্গে দুজন সহকর্মী ছিলেন। আপনারা জানেন, বিচারপতির পদত্যাগ বা অপসারণ- এটার একটা প্রক্রিয়া আছে। বর্তমানে দেশে এ-সংক্রান্ত কোনো আইন বিদ্যমান নেই। বিগত সরকার সংসদের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছিল। একটা সংশোধনী হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট সেটা বাতিল করে দিয়েছেন। সেটা আবার সরকার রিভিউ আকারে পেশ করেছে। আগামী রোববার ২০ অক্টোবর সেটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগে শুনানি হবে। ১ নম্বর আইটেম রাখা হয়েছে সেটি।
আজিজ আহমদ ভূঞা বলেন, অন্যদিকে বিচারপতিদের পদত্যাগের আপনাদের যে দাবি, বিচারপতিদের নিয়োগকর্তা হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। পদত্যাগ বা অপসারণের সেই উদ্যোগও রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে হয়ে থাকে। এখানে সুপ্রিম কোর্টের, প্রধান বিচারপতির যেটা করণীয়, উনি সেটা করেছেন। জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, আপাতত ১২ জন বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। বেঞ্চ না দেওয়ার অর্থই হলো, তারা এই যে আগামী ২০ অক্টোবর কোর্ট খুলবে, তারা আর বিচারকাজে অংশ নিতে পারবেন না। ওই মামলাটির (ষোড়শ সংশোধনী রিভিউ) শুনানি আছে ২০ তারিখে। অ্যাটর্নি জেনারেল সেটি প্লেস করবেন। আশা করছি, এর মাধ্যমে পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলো শুরু হবে। আর বিচারপতি অপসারণের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট এককভাবে জড়িত নন; রাষ্ট্রপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও আইন উপদেষ্টা জড়িত আছে। আপাতত ১২ জনকে বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে শুনানির মাধ্যমে বাকিগুলো আপনাদের সামনে আসবে।
তিনি বলেন, ২০ অক্টোবর বিচারকদের অপসারণ সংক্রান্ত মামলা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে তোলা হবে। ওইদিন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায় দেবেন।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় আশা করি রোববার আসবে। বিচারপতিদের সেদিনই পদত্যাগ করতে হবে। রায়ের জন্য রোববার বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। এর মধ্যে ফ্যাসিস্ট ১২ বিচারপতিকে অপসারণ না করলে আরও কঠোর আন্দোলনের যাবো।
উল্লেখ্য, এই ১২ বিচারপতির বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া তারা আওয়ামী সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।