■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
গাজায় হামাসের উপপ্রধান ও গোষ্ঠীটির প্রধান মধ্যস্থতাকারী খলিল আল-হাইয়া শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) ইয়াহিয়া সিনওয়ার ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
শুক্রবার এক ভিডিও বিবৃতিতে আল-হাইয়া বলেছেন, সিনওয়ারের মৃত্যু হামাসকে আরও শক্তিশালী করবে এবং শিগগিরই দখলদাররা এর জন্য অনুতপ্ত হবে।
সেই সঙ্গে হামাসের হাতে আটক থাকা ১০১ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে না বলেও জানান খলিল আল-হাইয়া। তিনি বলেন, যতক্ষণ না আগ্রাসন বন্ধ হয় এবং ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনি অঞ্চলের গাজা উপত্যকা থেকে সরে যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত জিম্মিদের কোনো মুক্তি নেই।
হামাসের এই কর্মকর্তা এ সময় নিহত হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে ‘একজন জাতীয় বীর’ বলে প্রশংসা করেন এবং বলেন, ‘তিনি তার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন’।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সিনওয়ারকে হত্যার দাবি করে ইসরায়েল। এখনো হামাস এ ব্যাপারে কোনো বিবৃতি দেয়নি। ইসরায়েলের দাবি অস্বীকারও করেনি। কিন্তু গোষ্ঠীটির প্রধান হিসেবে অলিখিতভাবে খালেদ মেশালের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছে।
লেবাননের এলবিসিআই নিউজের বরাত দিয়ে তাস জানিয়েছে, হামাসের পলিটিক্যাল ব্যুরোর চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর গোষ্ঠীটির বৈদেশিক প্রধান খালেদ মেশাল ফিলিস্তিনি সংগঠনটির হাল ধরেছেন।
সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, মেশাল ভারপ্রাপ্ত প্রধানের ভূমিকা নিয়েছেন এবং এখন ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনায় তিনি নেতৃত্ব দেবেন। এ ছাড়া হামাসের মিত্রদের সঙ্গে যোগাযোগও তিনি করবেন।
সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, হামাস নতুন নেতৃত্বের বিষয়টি তুরস্ক, কাতার ও মিসরীয় কর্মকর্তাদের জানিয়েছে। তাদের কাছে তেল আল-সুলতানে ইসরায়েলি এক অভিযানে সিনওয়ারের মৃত্যুর কথাও স্বীকার করেছে। এও জানিয়েছে, সিনওয়ারের মৃত্যুতে বন্দিদের বিনিময় এবং যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে আলোচনা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠবে।
গত ১৩ জুলাই ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন হামাসের সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ। তিনিসহ আরও অনেক হামাস নেতাকে ইসরায়েল হত্যা করেছে পরিকল্পিত অভিযান ও সুনির্দিষ্ট নিশানাকেন্দ্রিক হামলা চালিয়ে। অর্থাৎ অবস্থান শনাক্ত করে হামলা চালিয়ে তাঁদের হত্যা করা হয়। কিন্তু সিনওয়ার হত্যার অভিযানটি পরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট নিশানাকেন্দ্রিক ছিল না।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, বুধবার দক্ষিণ গাজার তেল আল সুলতান এলাকায় তল্লাশি-অনুসন্ধান চালানোর সময় সিনওয়ারকে পেয়ে যান ইসরায়েলের পদাতিক সেনারা। এলাকাটিতে হামাসের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্য অবস্থান করছেন, এমনটা ভেবে অভিযান চালাচ্ছিলেন ইসরায়েলি সেনারা। সেখানে সিনওয়ারের থাকার বিষয়টি জানতেন না ইসরায়েলি সেনারা।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানান, অভিযানকালে সেনারা তিনজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে বিভিন্ন ভবনের মধ্য দিয়ে সরে যেতে দেখেন। একপর্যায়ে তাঁরা গুলি চালান। দুই পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এ সময় সিনওয়ার সরে গিয়ে একটি বিধ্বস্ত ভবনে ঢুকে পড়েন।
ইসরায়েলের গণমাধ্যমের বিবরণ অনুযায়ী, পরবর্তী সময়ে ভবনটি লক্ষ্য করে ট্যাংক দিয়ে একাধিক গোলা ছোড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। এ ছাড়া তারা একটি ক্ষেপণাস্ত্রও ছোড়ে।
গতকাল ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী একটি ছোট ড্রোন থেকে নেওয়া ফুটেজ প্রকাশ করে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, ফুটেজে যে ব্যক্তিকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়, তিনি সিনওয়ার। তাঁর হাতে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। তাঁর মুখ স্কার্ফে ঢাকা। ফুটেজে দেখা যায়, তিনি ড্রোনটির দিকে একটি লাঠি ছুড়ে মারার চেষ্টা করছেন। তিনি এভাবে ড্রোনটিকে ফেলে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, অভিযানকালে সিনওয়ারকে শুধু একজন হামাস যোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন ইসরায়েলি সেনারা। তাঁর সঙ্গে ছিল একটি অস্ত্র, একটি প্রতিরক্ষামূলক জ্যাকেট ও ৪০ হাজার ইসরায়েলি মুদ্রা শেকেল।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ব্রিফিংয়ে ড্যানিয়েল হাগারি সাংবাদিকদের বলেন, সিনওয়ার পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী তাঁকে নির্মূল করে।
ইয়াহিয়া সিনওয়ার ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
ইসরায়েলি হিসাব অনুযায়ী, ওই দিন হামাস ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং প্রায় ২৫০ জনকে গাজায় জিম্মি করে নিয়ে যায়।
এই ঘটনার জেরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসকে নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর থেকে হামাস বিরামহীন বিমান হামলার মুখোমুখি হচ্ছে।
গত ৬ আগস্ট তেহরানে নিহত সাবেক রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়ার উত্তরসূরি হিসেবে সিনওয়ারকে দলটির সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের একটি শরণার্থী শিবিরে জন্ম নেওয়া ৬২ বছর বয়সী সিনওয়ার ২০১৭ সালে গাজায় হামাসের নেতা নির্বাচিত হন।
সিনওয়ার তার প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের অর্ধেক সময় ইসরায়েলি কারাগারে কাটিয়েছেন। হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের পর জীবিত থাকা হামাসের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা ছিলেন তিনি।