■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
সরকারি চাকরিতে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর অনুমোদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়।
সভায় ‘সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নব নন ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
এছাড়া, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ তিন বার অংশ নিতে পারবেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে অধ্যাদেশটি অনুমোদন করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে-
- বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সকল ক্যাডারের চাকুরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বৎসর নির্ধারিত হবে।
- বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের আওতা বহির্ভূত সকল সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বৎসর নির্ধারিত হবে।
- স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ন্তশাসিত সংস্থার ক্ষেত্রে স্ব স্ব নিয়োগ বিধিমালা প্রয়োজনীয় অভিযোজন- সাপেক্ষে প্রযোজ্য হবে।
- প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগসমূহ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষেত্রে স্ব স্ব নিয়োগ বিধিমালা বহাল থাকবে।
এছাড়া, এ অধ্যাদেশের আলোকে ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’-এর ধারা ৫৯-এ প্রদন্ত ক্ষমতাবলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা, ২০১৪’ পুনগঠনপূর্বক বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ তিন বার অবতীর্ণ হতে পারবে. বিধি সংযোজন করবে।
গত ১৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে সুপারিশ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় এ বিষয়ে গঠিত কমিটি।
কমিটির প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী সে সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়স সীমা পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩৫ এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৩৭ বছর করার সুপারিশ করা হয়েছে।
চাকরিপ্রত্যাশীদের বড় একটি অংশ দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবি জানিয়ে আসছেন। এনিয়ে সম্প্রতি শাহবাড় মোড় অবরোধও করেন তারা।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনেরও একই দাবি।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ ও অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর নির্ধারণের প্রস্তাব দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
চাকরিপ্রত্যাশী ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দাবি বিবেচনায় নিয়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২ বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
তবে অবসরে যাওয়ার বয়স নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।
বয়সসীমা ৩৫ করে প্রজ্ঞাপন দিতে আল্টিমেটাম
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে ৩২ করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন ৩৫ প্রত্যাশীরা। একই সঙ্গে এ বয়সসীমা ৩৫ করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে ৩ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা। দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আলটিমেটাম দেন আন্দোলনরতরা।
আজ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নির্ধারণ করে একটি অধ্যাদেশের খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এতে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ বছর।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এ সিদ্ধান্ত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ‘প্রতারণার শামিল’ দাবি করে বক্তারা বলেন, ‘আপনারা যদি নিজেরাই এটা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তাহলে কেন তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন? তাহলে তদন্ত কমিটি কি অযোগ্য ছিল? যদি তারা অযোগ্য হয়ে থাকে তাহলে আপনারা সেটা স্বীকার করুন। আর যদি আপনারা মনে করেন যে তারা যোগ্য ছিল তাহলে তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিন। তারা ছেলেদের ৩৫ ও মেয়েদের ৩৭ বছরর করার যে প্রস্তাবনা দিয়েছলেন সেটা মেনে নিয়ে গেজেট প্রকাশ করুন।’
তারা আরও বলেন, ‘আমরা রক্ত চাই না, আমরা সুষ্ঠু সমাধান চাই। আপনারা দাবি মেনে না নিলে ছাত্রসমাজ পুনরায় জেগে উঠবে। রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তখন এই দায়ভার আপনাদের ঘাড়েই পড়বে।’
দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে ৩৫ প্রত্যাশীরা বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ৩৫ এর জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি। কিন্তু আপনারা হুট করে ৩২ বছর করে প্রজ্ঞাপন জারি করলেন। আপনাদের কমিটি যদি বিচক্ষণ হয়ে থাকে তাহলে ৩৫/৩৭ কেন আপনাদের পছন্দ হলো না? আপনারা কোন সাহসে ৩২ বছর করে প্রজ্ঞাপন করলেন? আপনাদের বিচক্ষণতা নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলছি। আবার যদি বয়সমীমা ৩৫ করে গেজেট না আসে তাহলে বাকিটা মাঠে দেখতে পারবেন আপনারা।’