অতিপ্রবল রূপ নিল ঘূর্ণিঝড় ডানা

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

অতিপ্রবল রূপ নিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ডানা। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) দেওয়া আবহাওয়ার সর্বশেষ তথ্যে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মিন্ট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ডানা উত্তর-উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের দিকে সরে গিয়ে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের পুড়ি ও সাগরদ্বীপের মাঝামাঝি অঞ্চল দিয়ে ২৪ অক্টোবর রাত থেকে ২৫ অক্টোবর সকালের মধ্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আঘাত হানতে পারে।

আরও বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলের কাছাকাছি চলে এসেছে। এটির প্রভাবে পুড়ি, কুটাক, হুগলি এবং কলকাতায় তীব্র ঝোড়ো হাওয়া ও ভারি বৃষ্টিপাত হবে।

অপর এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি যখন উপকূলে আছড়ে পড়বে তখন এটির বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। ওই সময় ১২০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বইতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কিছু কিছু জায়গায় অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। এটির প্রভাবে ইতোমধ্যে পুরো বাংলাদেশে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা ঘনকালো মেঘে ঢেকে যায়। এরপর শুরু হয় ভারী বৃষ্টিপাত। ওই সময় প্রচণ্ড বেগে বাতাসও বইছিল।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কতা হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেই বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ভারতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর অংশ ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্তত ১০ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

দেশের উপকূলীয় ১৪ জেলায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র প্রভাবে দেশের উপকূলীয় ১৪ জেলায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। বৃহস্পতিবার দুপুরে দেওয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ মধ্যরাতে ভারতের ওডিশা রাজ্যের উপকূলে আঘাত হানতে পারে এই ঘূর্ণিঝড়। আর এর প্রভাবেই বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা আছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা।

দুপুরে দেওয়ার আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির সামনের অংশের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং এসব এলাকার কাছের দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট বেশি উচ্চতার  জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় থাকা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ আরও উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে এগিয়ে গেছে। আজ বেলা ১২ টায়  চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ- দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং আজ মধ্যরাত নাগাদ ভারতের ওডিশা রাজ্যের পুরী ও পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ এর মাঝখান দিয়ে ভারতের উত্তর ওডিশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং এর কাছের দ্বীপ ও চরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি) বৃষ্টি হতে পারে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার। এটি দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছের এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেন, এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের যে গতিপ্রকৃতি তাতে এটি ভারতের ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে আজ মধ্যরাতে। তবে এর প্রভাবে ইতিমধ্যে দেশের উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। আগামীকালও রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি থাকতে পারে।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ

ঢাকাসহ পাঁচ বিভাগে অতি ভারী বৃষ্টির আভাস

রাজধানী ঢাকাসহ পাঁচ বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। আজ বিকেল ৩টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।

অধিদপ্তর জানায়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র প্রভাবে রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ২৪ অক্টোবর বিকেল ৩টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এসব এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বেড়েছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন উপকূলের মানুষ। যদিও ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের সমতলে প্রবেশ করার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *