দিল্লির সুরক্ষিত বিশাল বাংলোতে আছেন শেখ হাসিনা

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■ 

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লির লোধি গার্ডেনের লুটেনস বাংলো জোনের এক সুরক্ষিত বাড়িতে আছেন বলে নিশ্চিত করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার মর্যাদার সঙ্গে মানানসই বিশাল বাংলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। লুটেনসে অবস্থিত এই ধরনের বাংলো সাধারণত মন্ত্রী, বয়োজ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লির ওই বাড়িতে দুই মাসের বেশি সময় ধরে অবস্থান করছেন বলে দ্য প্রিন্ট দাবি করেছে। তবে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষায় বাংলোর নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা হয়নি।

লুটেনস বাংলো এলাকাটি প্রায় দুই হাজার ৮০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এটি দিল্লির অন্যতম সুন্দর ও আকাঙ্ক্ষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত।

এখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, শীর্ষ কর্মকর্তা এবং ধনী ব্যক্তিরা বাস করেন। এলাকাটিতে প্রায় এক হাজার বড় বড় বাংলো রয়েছে।

সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, উপযুক্ত নিরাপত্তা ও প্রটোকল নিয়ে প্রায় সময়ই বাংলো থেকে হাঁটতে বের হন শেখ হাসিনা। তাঁকে ঘিরে শক্তিশালী নিরাপত্তা বলয় রয়েছে। কর্মীরা তাঁকে সার্বক্ষণিক পাহারা দেন। তবে তাঁরা সাধারণ পোশাকে থাকেন। একজন ‘মর্যাদাবান ব্যক্তি’ হিসেবে তাঁকে এই ধরনের সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে। 

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তাঁর সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ খুব ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ছিলেন। প্রাথমিকভাবে ভারতের উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদে অবস্থিত হিন্দন বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করে তাঁকে বহনকারী বিমানটি। 

সেখানে পরে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন ভারতের প্রধান নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা। সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ওই বিমানঘাঁটিতে মাত্র দুয়েক দিন ছিলেন শেখ হাসিনা। তারপরই নয়াদিল্লিতে চলে যান। 

সূত্রটি বলেছে, ‘তিনি বেশিক্ষণ বিমানঘাঁটিতে থাকতে পারতেন না। কারণ, সেখানে পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা ছিল না। তাই কয়েক দিনের মধ্যে তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে দিল্লির লুটেনসে নিরাপদ ও সুরক্ষিত এলাকায় তাঁর জন্য বাড়ির ব্যবস্থা করা হয়।’ 

নয়াদিল্লির ওই এলাকা বেশ সুরক্ষিত। ভারতের সাবেক ও বর্তমান অনেক সংসদ সদস্য সেখানে বসবাস করছেন। শেখ হাসিনা বাড়ি থেকে বাইরে বের হন কি না জানতে চাইলে সূত্রটি বলেছে, ‘কোনো প্রয়োজন হলে মূল নিরাপত্তা বাহিনীকে জানানো হয় এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’ 

প্রতিবেদনে বলা হয়, আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনার অবস্থান বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রকাশ করেনি ভারত সরকার। গত আগস্টে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সংসদে বলেছিলেন, হাসিনা ‘কিছু সময়ের জন্য’ ভারতে থাকার অনুমোদন চেয়েছিলেন। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, নিরাপত্তা কারণে শেখ হাসিনা ভারতে এসেছেন এবং একই কারণে এখানে অবস্থান করবেন।

শেখ হাসিনার সঙ্গে শেখ রেহানাও ওই বাংলোতে অবস্থান করছেন কি না, সেই বিষয়ে কোনো তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বার্তা পাঠিয়েছে দ্য প্রিন্ট। নতুন কোনো তথ্য পেলে প্রতিবেদন হালনাগাদ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে জুলাই-আগস্টে গণহত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ১৮ নভেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে হাজিরের নির্দেশও দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। 

গত ১৭ অক্টোবর চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের করা আবেদন গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। সদস্যরা হলেন, বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *