নিখোঁজের ৭ দিন পর শিশু মুনতাহার মরদেহ উদ্ধার

■ সিলেট প্রতিনিধি ■ 

সিলেটের কানাইঘাটে নিখোঁজের ৭ দিন পর নালা থেকে শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনের (৬) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (৯ নভেম্বর) রাত তিনটার দিকে বাড়ির পাশের একটি নালা থেকে তার নিথর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় শিশুটির গলায় রশি পেঁচানো ছিল।

মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নি‌শ্চিত করেছেন কানাইঘাট থানার উপপ‌রিদর্শক (এসআই) খালেদ আহমেদ।

মুনতাহা আক্তার জেরিন সদর ইউনিয়নের বীরদলের ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমেদের মেয়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফিরে প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে খেলা করতে যায় মুনতাহা। কিন্তু বিকেল হলেও বাড়ি না ফেরায় খোঁজ নিতে গিয়ে মুনতাহার আর সন্ধান পাওয়া যায়‌নি। শিশুটির খোঁজ দিতে ফেসবুকে অনেকে পোস্ট দিয়েছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, শনিবার (৯ নভেম্বর) রাতে সন্দেহজনকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশু মুনতাহার গৃহশিক্ষিকা শামীমা বেগম মার্জিয়াকে থানায় নেয় পুলিশ। এ সময় তার আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে মার্জিয়ার বাড়িতে মুনতাহার সন্ধানে তল্লাশি চালান স্থানীয়রা। রাত সাড়ে ৩টার দিকে মার্জিয়ার বাড়ির আশপাশে তল্লাশি চালানোর এক পর্যায়ে মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবিকে অন্ধকারের মধ্যে রাস্তা পার হতে দেখেন। এ সময় তাকে আটকাতে চাইলে তিনি দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় স্থানীয়রা কাদামাটি মাখা মুনতাহার লাশ দেখতে পান। পরে মার্জিয়ার মাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা।

কানাইঘাট সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আহমদ বলেন, মুনতাহার নিখোঁজের পর থেকে পুলিশ আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছিল। কিন্তু কোনো ক্লু পাচ্ছিল না। শনিবার স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে মার্জিয়ার আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়। পরে রাতে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। এরপর স্থানীয় ইউপি সদস্যকে মার্জিয়ার বাড়ির আশপাশে মাটি খোঁড়া আছে কি না খোঁজ নিতে বলেন।

শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনকে হত্যার দায়ে আটক মর্জিয়া আক্তার, তার মা আলীফজান এবং আলীফজানের মা কুতুবজান।

তিনি বলেন, মুনতাহার স্বজনসহ স্থানীয়রা রোববার রাতভর মাটিখোঁড়া কোনো জায়গা আছে কি না খুঁজতে থাকেন। ফজরের আজানের আগ মুহূর্তে মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবিকে হঠাৎ অন্ধাকারের মধ্যে রাস্তা পার হতে দেখেন। এ সময় তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্ঠা করলে স্থানীয়রা তাকে আটক করেন। পরে কাদামাটি মাখা মুনতাহার লাশ দেখতে পান। আটকের পর তিনি জানান, লাশ প্রথমে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছিল। রাতে সেখান থেকে মরদেহ তুলে মুনতাহার চাচার বাড়ির পুকুরে ফেলতে চেয়েছিলেন তিনি।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, মার্জিয়া মুনতাহার প্রতিবেশী। একসময় ভিক্ষা করতেন মার্জিয়ার মা ও নানী। মুনতাহাকে বাড়িতে পড়াতেন মার্জিয়া। মার্জিয়াকে তার স্বামী ছেড়ে চলে গেছেন। ফলে বাড়ির বাইরে গেলে মুনতাহাকে সঙ্গে নিতেন মার্জিয়া। সবাই তাকে বিশ্বাসও করতেন। তবে কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা জানা যায়নি। সম্প্রতি মার্জিয়ার পরিবারের সঙ্গে তাদের বিরোধ চলছিল বলে জানতে পেরেছি।

শিশু‌টি নিখোঁজের পর থেকে পরিবার দাবি করে আস‌ছিল, পরিকল্পিতভাবে মুনতাহাকে অপহরণ করা হয়েছে। নিখোঁজের ঘটনায় কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। শিশু‌টির খোঁজ জানালে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল প‌রিবার।

সিলেট জেলা পুলিশের কানাইঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার অলোক কান্তি শর্মা জানান, শিশুটির মরদেহ দড়ি দিয়ে বেঁধে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল। লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি এবং হত্যার কারণ উদঘাটনের জন্য আলেয়াজানের বৃদ্ধ মা কুতুবজান বেগমকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছি। হত্যার প্রাথমিক কারণ হিসেবে শিশুটির বাবার সঙ্গে তাদের পারিবারিক পূর্বশত্রুতার কারণ থাকতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।’

এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা মর্জিয়ার বসতঘর গুড়িয়ে দেন।  

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, ঘটনার দিন রোববার (৩ নভেম্বর) আমার বাড়িতে খেলা করছিল মুনতাহা। ওইদিন শিশুটিকে ধরে নিয়ে হত্যার পর মরদেহ ঘরের পাশে খালে পুঁতে রাখা হবে তা কল্পনা করতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বিশ্বাস ছিল শিশুটিকে জীবিত পাবো। কিন্তু ঘরের পাশে তার মরদেহ মিলবে, তাকে হত্যা করা হবে কল্পনা করিনি।  এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।

কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আউয়াল জানান, মুনতাহাকে রোববার অপহরণের পর ওইদিনই তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ ঘরের পাশের একটি খালে কাদামাটিতে পুঁতে রাখা হয়। আজ ভোরে আলীফজান বেগম মরদেহ সরানোর চেষ্টাকালে স্থানীয়রা দেখে ফেলেন। এ সময় স্থানীয়রা থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময় মর্জিয়া, তার মা ও নানিকে আটক করা হয়। এর মধ্যে আলীফজান ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। তবে কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *