■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী মো. আবদুল্লাহ মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্য উপ-কমিটির সদস্য শাহরিয়ার মোহাম্মদ ইয়ামিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আবদুল্লাহর বাবা আব্দুল জব্বার বলেন, “গত মাসের ১০ তারিখে সিএমএইচে তার অপারেশন করেন ডাক্তাররা। অপারেশন সাকসেসফুলও ছিল।
“অপারেশনের কয়েকদিন পর আমার ছেলে আমার সঙ্গে হেঁটে বেড়াইছে, আমার সঙ্গে খাবার খাইছে। ২০-২২ দিন আগে সে আবার অসুস্থ্ হয়ে পড়ে। আজ সকালে একেবারে চলে গেল।”
আবদুল্লাহর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন ক্যান্টনমেন্ট থানার এসআই মনিরুজ্জামান।
ময়নাতদন্ত শেষের কথা জানিয়ে দুপুরে আবদুল্লাহর বাবা জব্বার বলেন, “মোহাম্মদপুরে তার গোসল করানো হচ্ছে। এরপর তাকে তার কলেজে নিয়ে যাব, সেখানে তার জানাযা হবে।
“বাদ মাগরিব শহীদ মিনারে জানাযা শেষে তাকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাব, সেখানেই তার দাফন হবে।”
সোহরাওয়ার্দী কলেজের কম্পিউটার অপারেটর শরীফুল ইসলাম বলেন, “আবদুল্লাহর মৃত্যুতে আমরা কলেজের পক্ষ থেকে সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নোটিস করেছি।
“আজ আসরের নামাজের পর কলেজ প্রাঙ্গণে ও মাগরিবের নামাজের পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।”
মৃতের মেজোভাই নুর আলম বলেন, আবদুল্লাহ সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, আব্দুল্লাহ যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বড় আচড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর জব্বার ও নাজিয়া খাতুন দম্পতির সন্তান। আন্দোলনের শুরু থেকেই আব্দুল্লাহ সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
জানা গেছে, হাসিনার পতনের দিন গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর তাঁতীবাজার মোড়ে বংশাল থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন আব্দুল্লাহ। তার কপালের ঠিক মাঝ বরাবর গুলি লাগে। প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা পড়ে থাকার পর প্রথমে তাকে মিটফোর্ড এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখানে রাত ৩টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অপারেশনের পর ডাক্তাররা তাকে আশ্বস্ত করেন সুস্থ হওয়ার ব্যাপারে। দুদিন পর তাকে রিলিজ দিলে তিনি বাসায় চলে যান।
তবে বাড়িতে এসে তার প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হলে তাকে আবার ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। চিকিৎসকরা মাথার ভেতরে ইনফেকশন দেখতে পান যা তরল প্লাজমার মতো গলে গলে পড়তে থাকে। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ২২ আগস্ট তাকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর আব্দুল্লাহর কলেজ ক্যাম্পাস প্রাঙ্গনে ও সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। পরে নিহতের মরদেহ আনা হবে যশোরের বেনাপোলে। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।