রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিধান থাকছে না

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■ 

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিধান আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে থাকছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, কোন রাজনৈতিক দল যদি নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন বা দাবি উঠে তবে সেটি রাজনৈতিক দলের ঐক্যমতে ভিত্তিতে করা হবে।

বুধবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

আইন উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আগের আইনের বলা ছিল কোনো রাজনৈতিক দল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের করলে ট্রাইব্যুনাল চাইলে নিষিদ্ধ করতে পারবে। তবে আজকের উপদেষ্টা পরিষদে সেটি সংশোধন করা হয়েছে। এখন ট্রাইব্যুনাল যদি প্রয়োজন মনে করে তবে তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করতে পারবে।

তিনি বলেন, আমরা ট্রাইব্যুনালের বিচারকে অন্য কোন বিষয়ের সঙ্গে সম্পূক্ত করতে চাই না। রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে আসলে এই আইনকে অযথাই প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রশ্ন সৃষ্টি হবে। আমরা সেই সুযোগ দিতে চাই না। পেয়ার ওয়েরে (সুষ্ঠভাবে) বিচার করতে চাই।

আসিফ নজরুল বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কাজের জন্য যদি নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন হয় বা দাবি উঠে তাহালে অন্যান্য আইন রয়েছে সেগুলোতে নিষিদ্ধ করা হবে। এক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল শুধু যথাযথ কতৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবে। সন্ত্রাস দমন আইন, নির্বাচন আইনের রয়েছে। রাজনৈতিক ঐক্যমত হলে পরে বিবেচনা করবো। ফলে আন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের আর বিষয়টি থাকবে না।  

আইন উপদেষ্টা জানান, খসড়ায় বলা হয়েছে, আদালত যদি মনে করেন তারা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কনসার্নড অথোরিটির (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ) কাছে সুপারিশ করতে পারেন। `কনসার্নড অথোরিটি’ হিসেবে আদালত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশনের কাছে সুপারিশ করতে পারে। তবে এসব বিষয় খসড়ায় বলা নেই।

আসিফ নজরুল বলেন, ট্রাইব্যুনালের আইনটি পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক সংখ্যক মানুষের মতামত নিয়েছি। ট্রাইব্যুনালে আইনটি সংশোধনের জন্য বন্ড কনসালট্রেশন করেছিলাম। দেশের যত আইন বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার কর্মী ছিল সবার মতাসত নিয়ছি। দেশী বিদেশী প্রশিদ্ধ আইনজীবীদের মতামত নিয়েছি, জাতিসংঘের মানবাধিকার ফোরামেও পাঠানো হয়েছে। সকাল মতামতের ড্রাফট করে আজ উপদেষ্টা পরিষদ উত্থাপন করা কলে তা পাস করেছে। এর উদ্দেশ্য হল ট্রাইব্যুনাল বিচার নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন উঠতে না পারে।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেছিলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থাকলে ও আদালত মনে করলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই সুপারিশ করা যাবে। এমন বিধান রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করা হয়েছে।

আজকের সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৪’–এর খসড়াটি উপদেষ্টা পরিষদের বেঠকে উপস্থাপন করা হয়েছিল এবং এটি গৃহীত হয়েছে। 

আসিফ নজরুল বলেন, তারা অনুভব করেছেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের অপরাধমূলক কার্যক্রমের জন্য যদি নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন হয়, যদি নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে সমাজে, তাহলে অন্যান্য আইন রয়েছে। সেসব আইনে নিষিদ্ধ করার বিধান আছে। সন্ত্রাস দমন আইনে রয়েছে, নির্বাচনী আইনে রয়েছে, ‘দ্য পলিটিক্যাল পার্টিস অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৮’–এ রয়েছে। কাজেই এখানে [‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) সংশোধন অধ্যাদেশ] এই বিধানটি নেই দেখে জনমতের প্রতি, জনদাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ থাকল না এটা নয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে থাকল না, কিন্তু দেশে প্রচলিত অন্যান্য আইন রয়েছে। রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে…সেটা পরে বিবেচনা করা হবে।

আইনে বেশ কিছু বিষয় সংশোধন করা হয়েছে বলেও জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘ক্রাইম অ্যাগেইন জেনোসাইডের সংজ্ঞা আমরা রোম স্ট্যাটিউট অবলম্বে করেছি। এই আইনে যারা অভিযুক্ত পক্ষ আছে, তাঁদের প্রসিকিউশনের সমান সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আপনারা ১৯৭৩ সালের আইনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখবেন অভিযুক্ত পক্ষ যে কোনো সাক্ষী আনতে পারবেন। আইনে ভিকটিম প্রোটেকশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই আইনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। এই ট্রাইব্যুনাল ইচ্ছে করলে এই বিচারটা অডিও-ভিজুয়াল করতে পারবেন। তারা মনে করলে এটা প্রচার বা কোন অংশ প্রচার করা দরকার সেটা প্রচার করবেন। এখানে যে পক্ষগুলো আছে তাদের অধিকারের দিকে নজর রেখে এটা করা হবে। এ আইনে তিন ধরনের বাহিনীকে (ডিসিপ্লিন ফোর্স, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, এক্সিলারি ফোর্স) বিচারের আওতায় আনার বিধান করা হয়েছে। এই আইনে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের বিধান রয়েছে, অবজারভারের বিধান রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ আইনে সাধারণ আপিল করার সুযোগতো থাকবেই। ইন্টারলুকেইটারি অর্ডার (অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিকার) করার সুযোগও থাকবে। অর্থাৎ তারা এর বিচার চলাকালে আপিল বিভাগে যেতে পারবেন।’

মৃত্যুদণ্ড বাতিল করার দাবির বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের আইনে শত শত বছর ধরে এ বিধান রয়েছে, আমরা কোনো নতুন বিধান করিনি।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন, যুব-ক্রীড়া ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *