■ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ■
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবর্ষণকারী যুবলীগ কর্মী তৌহিদুল ইসলাম ফরিদকে (৩২) গ্রেফতার করেছে। গত ১৮ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর একাই ২৮টি গুলি ছোড়েন তৌহিদুল।
শুক্রবার রাতে সাতক্ষীরা জেলার কমলনগর এলাকা থেকে ফরিদকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানার পুলিশ। যুবলীগ কর্মী তৌহিদুল ইসলাম ফরিদ চান্দগাঁও ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এসরারুল হকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
গ্রেফতার ফরিদ চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানাধীন শমসের পাড়া এলাকার সেকান্দারের ছেলে।
শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের নগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সাতক্ষীরা থেকে তৌহিদুল ইসলাম ফরিদকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণের কথা স্বীকার করেন। তার বিরুদ্ধে পাঁচটি হত্যাসহ ১২টি মামলা রয়েছে।
চান্দগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আজহারুল ইসলাম বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তৌহিদুল একটি শাটার গান নিয়ে গুলিবর্ষণ করেন। গত ১৮ জুলাই নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় তৌহিদুল একাই ২৮টি গুলি ছোড়ার কথা স্বীকার করেছেন। ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধারে অভিযান চলছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ১৭ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রামে গুলিতে নিহত হন ১০ জন। আহত হন শতাধিক। এই ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবার ও স্বজনেরা নগরের বিভিন্ন থানা ও আদালতে অন্তত ২৫টিরও বেশি মামলা করেছে।
এর আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অস্ত্রধারীদের মধ্যে চারজনকে র্যাব এবং একজনকে নগর পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। সর্বশেষ তৌহিদুল ইসলাম ফরিদসহ মোট দুজনকে গ্রেফতার করে নগর পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে উপকমিশনার রইছ উদ্দিন বলেন, তৌহিদুল ইসলাম ফরিদ একজন পেশাদার সন্ত্রাসী। তাঁর বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় ১২টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি হত্যা মামলা রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিহতের ঘটনায় এসব হত্যা মামলায় তাঁকেও আসামি করা হয়।
তিনি বলেন, নগরের চান্দগাঁও এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীসহ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের অভিযোগ ছিল। এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর গুলিবর্ষণের একাধিক ছবি ছড়িয়ে পড়ে। গত ৫ আগস্টের পর ফরিদ আত্মগোপনে চলে যায়।
ঘটনার পর পুলিশ ফরিদকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে একটি টিম গঠন করে। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের একটি টিম তাঁকে সাতক্ষীরা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারের আগে ফরিদ একাধিকবার দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপকমিশনার বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় যেসব মামলা হয়েছে, সেসবের মধ্যে এজাহারনামীয় যেসব অস্ত্রধারী রয়েছে তাঁদের মধ্যে আমরা এই পর্যন্ত ৫৭ জনকে গ্রেফতার করেছি। অন্যদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
এদিকে সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশে হেফাজতে থাকা ফরিদ জানায়, তিনি চান্দগাঁও থানা যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন ফরহাদের নির্দেশে ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করেছিল। গুলিবর্ষণের জন্য তাঁকে টাকা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিল।
মহিউদ্দিন ফরহাদ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চান্দগাঁও ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এসরারুল হক এসরাইলের অনুসারী। আন্দোলন চলাকালে মহিউদ্দিন ফরহাদকেও অস্ত্র হাতে গুলিবর্ষণের একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকারীদের দমাতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে পিস্তল, শটগান, শাটার, দেশীয় এলজির পাশাপাশি অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় একে-২২ রাইফেলও ব্যবহার করেছিল ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। এতে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ হতাহত হন।