■ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ■
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমের গাড়িবহরের একটি গাড়িকে ধাক্কা দিয়েছে একটি ট্রাক। বহরে থাকা চট্টগ্রামের আরেক সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি অভিযোগ করেছেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাচেষ্টা।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি ইউনিয়নের হাজী রাস্তার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বহরে থাকা একটি প্রাইভেটকারের সঙ্গে ট্রাকের ধাক্কা লাগে। এতে গাড়িটির সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে কেউ আহত হয়নি। ট্রাকটি লোহাগাড়া থানা-পুলিশ আটক করেছে।
লোহাগাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুমিন ফরহাদ বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ট্রাক এবং চালককে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গাড়িতে সমন্বয়ক হাসনাত ও সারজিস ছিলেন না। তবে ওই গাড়িবহরের অংশ এটি। কালো রঙের ওই প্রাইভেটকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মো. আলী নেওয়াজসহ চারজন ছিলেন। অন্যদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।
হাসনাত ও সারজিসকে চাপা দেওয়া ওই ট্রাকটির মালিক একজন আওয়ামী লীগ নেতা। একইসঙ্গে তিনি জানান, ওই নেতা হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে পালাতক আছেন।
পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় প্রাইভেটকারে থাকা কেউ গুরুতর আহত হয়নি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টা করা সেই ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারকে আটক করা হয়েছে।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) রাতে চট্রগ্রামের লোহাগাড়া থানা পুলিশ তাদের আটক করে। তবে আটক সেই ড্রাইভার ও হেলপারের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
এর আগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে। লোহাগাড়া থানার দায়িত্বরত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. আলিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে একটি আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।
নিরাপত্তাঝুঁকিতে আছেন বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বয়ক খান তালাত মোহাম্মদ রাফি। বুধবার (২৭ নভেম্বর) নিজের ফেসবুক লাইভে এসে এই উদ্বেগ জানান তিনি।
ফেসবুক লাইভের ক্যাপশনে রাফি বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তাঝুঁকি আছে। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুক। শহীদ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আরিফ ভাইয়ের কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে আনুমানিক সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে আমাদেরকে ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘হয়তো বেঁচে থাকার কথা ছিল না। অথচ এখন কথা বলতে পারছি। বিভিন্ন ষড়যন্ত্র প্রতিনিয়তই ঘিরে আছে এবং বিভিন্নভাবে আমাদের বিপদের সম্মুখীন করার চেষ্টা চলছে। আমরা আজ আইনজীবি সাইফুল ইসলাম আলিফ ভাইয়ের বাড়িতে গিয়েছিলাম সারজিস ভাই, হাসনাত ভাইসহ। আমাদের সাথে তিনটা গাড়ি ছিল। আমরা কবর জিয়ারত করতে গিয়েছিলাম। আমরা ফেরার পথে সৌভাগ্যবশত আমরা গাড়ি চেঞ্জ করে ফেলেছিলাম। হাসনাত ভাই-সারজিস ভাই একটা গাড়িতে ছিলেন, আমি একটা গাড়িতে ছিলাম এবং আমার বন্ধুরা ও ভাইয়েরা অন্য আরেকটা গাড়িতে ছিল। আমরা পেছনে, সামনে ওই গাড়িটা ছিল। একটা ট্রাক এসে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের সামনের গাড়িকে চাপা দেওয়া হয়। যখন ট্রাক আসতে দেখেছে, তখনই গাড়িটা ব্রেক করা হয়। কিন্তু গাড়ি ব্রেক করা স্বত্তেও ট্রাক চাপা দেওয়া হয়।’
রাফি আরও বলেন, ‘গাড়িতে ট্রাকচাপা দেওয়ার পরও আরও দুটি বাইক দিয়ে চাপা দেয় গাড়িকে। এ সময় ড্রাইভারকে ধরে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলে, আমাকে মেরে ফেলবেন? মেরে ফেলেন। মামলা দেবেন? দিন। মানে সে ভিত্তিহীন কথা বলতে থাকে। পরে আমরা জানতে পারি যে ট্রাকটি চাপা দেয়, সেই চালক হলো আওয়ামী দোসর। তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।’
নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা জানি না আমাদের নিরাপত্তাটা কোথায়? আমার শুরু থেকে বলে আসতেছি, দিন নাই রাত নাই আমরা ছুটতেছি। যখন যেখানে যে সমস্যা হচ্ছে, আমরা যাচ্ছি। কথা বলতেছি। কিন্তু কিছু মহল শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের পেছনে লেগে আছে আমাদের ক্ষতি করার জন্য। যার প্রতিফিলন আজ আপনারা দেখেছেন।’ এ সময় তিনি এ ঘটনাকে পরিকল্পিত বলে দাবি করেন।