আগরতলায় বাংলাদেশের কনস্যুলার সেবা বন্ধ

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর কনস্যুলার সেবা বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, নিরাপত্তার কারণে আপাতত আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে কনস্যুলার সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে ওই মিশন থেকে বাংলাদেশের ভিসা সেবা বন্ধ থাকবে।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, নিরাপত্তাহীনতাজনিত অবস্থার প্রেক্ষাপটে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সহকারি হাইকমিশন, আগরতলাতে সকল প্রকার ভিসা ও কনস্যুলার সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

এর আগে চলমান ঘটনায় বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। বিকেল ৪টায় তিনি সেখানে হাজির হয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়াজ হামিদুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেন।

পরে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে দুই দেশের সম্পর্ক আটকে থাকার কারণ নেই, আমাদের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক গঠনমূলক সম্পর্ক নির্মাণ করতে চায় ভারত।

আধা ঘণ্টার এই বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়াজ হামিদুল্লাহর সঙ্গে কথা হয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা‌র।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসার পর রাষ্ট্রদূত বলেন, শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য দুই দেশের অভিন্ন আকাঙ্খা পূরণে ভারত বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।

রাষ্ট্রদূত দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে ‘বহুমুখী এবং বিস্তৃত’ হিসাবে বর্ণনা করে উল্লেখ করেন যে তারা কেবল একটি ইস্যু বা এজেন্ডা নিয়ে ব্যক্ত থাকতে পারে না।

তিনি আরো বলেন যে দু’দেশের অনেকগুলো আন্তঃনির্ভরতা রয়েছে এবং আমাদের পরস্পরের সুবিধার্থে সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

 সোমবার দুপুরে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় ব্যাপক ভাঙচুর ও বাংলাদেশের পতাকা খুলে নিয়ে এতে আগুন দেয় উগ্রবাদীরা।

আরএসএস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) সহযোগী সংগঠন হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির ব্যানারে একদল বিক্ষোভকারী এ হামলা করে।

হামলার ঘটনায় ৪ পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত, গ্রেফতার ৭

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে প্রবেশ ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চার পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৩২ (হামলা), ১৮৯ (২) (বেআইনি জমায়েত), ১৯১ (দাঙ্গার দোষী), ৩২৯ (৩) (অপরাধমূলক অনুপ্রবেশের জন্য দোষী) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- গোলচক্কর বর্ডারের বাসিন্দা ঝুটান দাস, দশমীঘাটের বাসিন্দা উজ্জ্বল দাস, অভয়নগরের বাসিন্দা দীপ্তনীল ভৌমিক, আমতলীর সূর্য দাস, এসডিও চৌমুহানির বাসিন্দা আলাক মজুমদার, প্রদীপ সাহা ও বেলোনিয়ার বাসিন্দা ঝুলন মালাকার। 

দেশটির পুলিশ অন্য সন্দেহভাজনদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে।

পশ্চিম ত্রিপুরার এসপি কিরণ কুমার কে জানিয়েছেন, এ ঘটনায় তিনজন উপ-পরিদর্শককে (এসআই) সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। আর পুলিশের একজন ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্টকে কাজ থেকে বিরত করা হয়েছে ও পুলিশ সদর দপ্তরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। 

কুমার বলেছেন,‘২০২৪ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ হাইকমিশনে দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য উপ-পরিদর্শক (ইউবি) দিলু  জমতিয়া ও জয়নাল হোসেন এবং সার্জেন্ট দেবব্রত সিনহার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যক্রম চলছে।’

কুমার আরও জানিয়েছেন, সোমবারের ঘটনায় একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত এখনও চলছে। বাংলাদেশ উপদূতাবাস চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। ত্রিপুরা পুলিশের কর্মী ও আধিকারিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ ও সাত জনকে গ্রেফতার করার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন তিনি।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *