চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৫০০ ছাড়াল

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫০৪ জনে।

গত একদিনে মারা যাওয়া সাতজনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৬ জন। এছাড়া বরিশাল বিভাগে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

গত একদিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৬২৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে (ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বাদে) সর্বোচ্চ ১৩৩ জন ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ১১৩, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১১১, খুলনা বিভাগে ৯২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৪, বরিশাল বিভাগে ৫৩, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩০, রাজশাহী বিভাগে ২৮, রংপুর বিভাগে ১২ ও সিলেট বিভাগের হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ১ জন ভর্তি হয়েছেন।

চলতি বছর ঢাকাসহ সারা দেশে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৩ হাজার ৬৮৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত বছর ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

এ বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি ১৯ হাজার ৮২৬ জন রোগী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরপর ঢাকা বিভাগের (ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বাদে) বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ১৭ হাজার ১৭৪ জন ভর্তি হয়েছেন। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৭ হাজার ১৭৪ জন ডেঙ্গু রোগী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

অপর দিকে এ বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি ২১২ রোগীর মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে। এরপর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৯১ জনের ও বরিশালে ৫৭ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৯০ হাজার ৬২২ জন রোগী। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২৫৫৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ১০১৪ জন; আর ১৫৪৫ ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি।

এ বছর মোট ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৫৬ হাজার ২৫০ জন ঢাকার বাইরের রোগী। ঢাকার দুই মহানগর এলাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৭ হাজার ৪৩৫ জন।

এ বছর সবচেয়ে বেশি ৩০ হাজার ৮৭৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছে অক্টোবর মাসে। সে মাসে ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এক মাসে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে নভেম্বরে, ১৭৩ জন। নভেম্বর মাসে ২৯ হাজার ৬৫২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ডিসেম্বরের প্রথম তিন দিনে ২ হাজার ২১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের।

২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭০৫ জন।

২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৮৬৮ জনের। এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৮ জন। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১ হাজার ৭০৫ জন। ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ মারা গিয়েছিল, শুধু ২০২৩ সালেই তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে। 

দেশের প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়।

২০০০ সালের পরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু ধীরে ধীরে কমে এলেও ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ভয়াবহ পরিস্থিতি অতিক্রম করে দেশ। ২০১৯ সালে ১ লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।

২০২০ সালে করোনার প্রকোপের মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম ছিল। ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে মারা যায় ৭ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।

ঢাকার তুলনায় এর বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল দ্বিগুণের বেশি। সারা দেশের মৃত্যুর ৫৮ শতাংশই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *