:: ফারহান আরিফ ::
রকি ও রাকা রমনা পার্কের এই বেঞ্চিটাতে এসে বসতো প্রায় প্রতিদিন। সেদিন রাকা এসে বসে আছে প্রায় আধাঘন্টা; রকির নামগন্ধও নাই। বিরক্ত রাকা উঠে চলে যাবে এমন সময় দেখতে পেল জোর পা চালিয়ে রকি ছুটে আসছে। রাকার মনে হল, একটা শিক্ষা দিয়ে দেই আজ!
বাদামভর্তি একটা কাগজের ঠোঙ্গা নিয়ে এসে পাশে বসতেই রাকার চোখেমুখে সেই আদিম অভিমান! রকি জানে এই অভিমানটা কিভাবে ভাঙাতে হয়। অনেকটা সময় ধরে চুপচাপ বসে আছে সে। রাকা আছে অন্যদিকে ফিরে। হঠাৎ অনশন ভেঙে রাকা চিৎকার করেই বলে উঠলো, “তুই কি আমাকে বিয়ে করবি, না ভেগে যাবি?”
প্রশ্ন শুনে রকি তব্দা খেয়ে রইলো। রাকার কাছে কখনো এই প্রশ্ন শুনে নি সে। বরং সবসময়ই প্রেরণা দিয়ে এসেছিল: তোমাকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি অপেক্ষা করবো।
“চল, কাজি অফিস কাছেই আছে।”- রকি হেসে উত্তর দিল।
: খাওয়াবে কি?
: অনার্স শেষ করে ফেলেছি। ছোটখাটো কিছু একটা করে চালিয়ে নিবো। বিশ্বাস আর ভালবাসাটা তবু বাঁচুক।
এবার যেন রাকা একটু থমকে গেল। এখন রাকার মাথাটা রকির কাঁধে। আজ দু’জনে বেশ অন্তরঙ্গ হয়ে পড়েছে। এমন অভিমানগুলো নাকি এভাবেই নিষ্পত্তি হয়। অন্তরঙ্গ প্রেমটুকু রিক্সাজুড়েও ছিল। এ শহরে এখন এত মানুষ যে, এমন প্রেমের জন্য হুডবন্ধ রিক্সাই নিরাপদ।
পশ্চিম রাজাবাজার রাকাকে নামিয়ে দিয়ে রিক্সাটা নিয়ে আজিমপুরের দিকে রওয়ানা দিবে রকি। রিক্সা থেকে এক পা ফেলে রাকার কণ্ঠ, “খুব বেশি তাড়া আছে?”
: তা আছে। উত্তেজনায় পানি ঢালতে হবে।
: নেমে আসো।- রাকার চোখমুখে সলজ্জভাব। রকিও যেন এই আবেদনকে না করতে পারলো না।
রকি এখন একটা বড় এমএনসিতে চাকুরি করে। অফিস থেকে ফেরার কালে মৎস্য ভবনে নেমে যায়। রমনার নির্মল অক্সিজেন নেয়ার লোভে এবং শাহবাগ পর্যন্ত জ্যাম এড়াতে। আজ অনেকদিন পর সেই পুরনো বেঞ্চিটাতে এসে বসলো রকি। গত ক’দিন খুব মনে পড়ছে রাকাকে। বিয়ের পর রাকা ফোন নম্বরটা বদলায় নি। খুব ফোন করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কি বলবে ফোন করে! আজ হঠাৎ সংবাদটা দেখার পর ভাবলো, পুরনো দিনের মতই সংবাদকে নিজেদের সাথে মিলিয়ে কথা শুরু করা যাক।
ওপারে রিং হয়ে কেটে গেল। আর ফোন করতে সাহস হল না রকির। কিছুক্ষণ পর ফিরতি কল। রিসিভ করতেই রাকার সেই পুরনো উচ্ছল কন্ঠ, “নাহ! আমি কোন মামলা করবো না। সুখেই আছি মোটামুটি। এখন খামাখা “বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ” মামলা করে তোমার ঘুম হারাম করতে চাই না।”
“আমি কিন্তু করতে পারি!”- হাসিকান্না একাকার হয়ে গেল রকির।
: বুদ্ধু! সেই আইন কিন্তু বাংলাদেশে নাই!
: কতদিন পর অমন হাসলে?
: এবার একটা বিয়ে করে ফেল। তাহলে রমনার বেঞ্চিতে বসে আর আমাকে মনে করতে হবে না।
দু’টি কণ্ঠই মেঘে মিলিয়ে যাচ্ছিলো।
পুনশ্চ: জানি, এই গল্প পড়ে অনেকেই চিন্তা করছেন: ভাগ্যিস, গার্লফ্রেন্ড এখন সুখে-শান্তিতে সংসার করছে।