■ নরসিংদী প্রতিনিধি ■
নরসিংদীর রায়পুরায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক ইউপি সদস্যসহ দুজন নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে আরও ১০ জন।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে জেলার রায়পুরা উপজেলার মেথিকান্দা এলাকায় এ সংঘর্ষ ঘটে।
নিহতরা হলেন- চান্দেরকান্দি ইউপি সদস্য মানিক মিয়া (৫৫) সাবেক নারী ইউপি সদস্য কল্পনা বেগম (৩২)। তারা উভয়ই রুবেল গ্রুপের সদস্য।
আহতরা হলো- জুয়েল (৩০), রাব্বি (২২), সাব্বির (৩৮), আমির হোসেন (২১), টুটুল (৩৫), বাদল ভেন্ডার (৫৫), মারুফ মিয়া (১৫), সুফিয়া বেগম (৩৮)।
পুলিশ জানায়, এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর এক সময়ের সমর্থক যুবলীগ নেতা আবিদ হাসান রুবেলের সঙ্গে তার অপর সর্মথক বাসেত মেম্বারের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে এই দ্বন্দ্ব আর বেড়ে যায়। এরই জেরে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার গুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সব সংঘর্ষে একাধিক ব্যক্তি আহত-নিহত ও মামলা পাল্টা মামলা হয়। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনে প্রচারণা চালানোর সময় প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমন মিয়াকে পিটিয়ে হত্যা করেন যুবলীগ নেতা আবিদ হাসান রুবেল ও তার সমর্থকরা। এ ঘটনায় রুবেল গাঁ ডাকা দেন। সম্প্রতি মামলায় জামিন নিয়ে এলাকায় এসে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান। এতে প্রতিপক্ষ বাসেত মেম্বার গ্রুপের সমর্থকরা বাধা দেন। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
শনিবার ভোরে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় প্রতিপক্ষ হামলা চালিয়ে আবিদ হাসান রুবেল এর সমর্থক মেম্বার মানিক মিয়াকে মাটিতে ফেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে পা কেটে ফেলেন। পরে প্রতিপক্ষরা পা নিয়ে উল্লাস করেন। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে চাঁন্দের কান্দি মহিলা ইউপি সদস্য কল্পনা বেগম ঘটনাস্থলেই মারা যান। খবর পেয়ে রায়পুরা থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে জোড়া হত্যাকাণ্ডের পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খান নুরউদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে দুইজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। এছাড়া আহত ছয়জন চিকিৎসা নিয়েছেন।
নরসিংদী পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে এ ঘটনা ঘটে। এই মুহূর্তে এলাকায় পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার ও গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের জেরে উপজেলা যুবলীগ নেতা আবিদ হাসান রুবেল ও রায়পুরা পৌর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হারুন অর রশিদের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিলো। এরই জেরে সংঘর্ষে রুবেলের চাচা মানিক মিয়া পার্শ্ববর্তী চান্দেরকান্দি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য বশির উদ্দিনের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এতে হারুন অর রশিদের সমর্থকরা তাকে বশির উদ্দিনের উঠানে কুপিয়ে হত্যা করে।
আহতদের হাসপাতালে আনা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আজ ভোরের দিকে এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির সময় আমার ভাই, ভাবি, ভাতিজাসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়। প্রথমে তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। আহতদের মধ্যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আমার চাচাতো ভাই আমির হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক হোসেন জানান, আজ সকালের দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় নরসিংদী থেকে নারীসহ পাঁচজনকে হাসপাতালে আনা হয়। বর্তমানে জরুরি বিভাগে তাদের চিকিৎসা চলছে।