ব্যাংক খাতে আমানত কমেছে ১৩৪৯৮ কোটি টাকা

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা। গত জুন শেষে ছিল ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। তিন মাসে আমানত কমেছে ১৩ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ও ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে সবচেয়ে বেশি আমানত কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আমানত কমেছে ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আর ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর কমেছে ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। একই সময় বিদেশি ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে ২ দশমিক ৪১ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকে বেড়েছে শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ইসলামী ধারার কিছু ব্যাংক এতোদিন এস আলমের দখলে ছিল। এসব ব্যাংক থেকে আলোচিত এ গ্রুপটি নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। যদিও আগের সরকারের আমলে ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি খারাপ হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সহায়তা করেছে।

তারা আরও বলছেন, নতুন গভর্নর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগদান করে অনৈতিক সুবিধা বন্ধ করে দেয়। এতে ব্যাংকগুলোর ক্ষত সামনে বেরিয়ে আসে। এ সময় গ্রাহকরা ব্যাংকগুলো থেকে আতঙ্কে টাকা তুলে নেয়। ফলে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর আমানত কমার এই চিত্র দেখা যায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জুলাই-সেপ্টম্বর সময় দেশে একটা অস্থিরতা ছিল। আগের সরকারের কয়েকটি ব্যাংকের দুর্বলতা প্রকট আকার ধারণ করলেও এতদিন সেটা প্রকাশ করা হয়নি। নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা প্রকাশ করায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছিল। তাই এসব ব্যাংকের গ্রাহকরা আতঙ্কে আমানত তুলে নিয়েছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু ব্যাংকে দেউলিয়া হয়ে গেছে মন্তব্য করায় এ খাতে বড় প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে ভালো ব্যাংকগুলোতে আমানত আবার জমা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কোটি টাকার বেশি থাকা হিসাব কমেছে ১৬৫৭টি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি থাকা হিসাব সংখ্যা কমেছে এক হাজার ৬৫৭টি। একইসঙ্গে এসব হিসাবে কমেছে ২৬ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। 

প্রতিবেদন বলছে, সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ব্যাংক হিসাবে। জুন প্রান্তিক শেষে এমন হিসাবের সংখ্যা ছিল এক লাখ ১৯ হাজার।

জুন প্রান্তিকে ব্যাংকে কোটিপতির হিসাব সংখ্যা বেড়েছিল প্রায় তিন হাজারের মত। মার্চ শেষে এই সংখ্যা ছিল এক লাখ ১৬ হাজার। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুন প্রান্তিক শেষে কোটি টাকার ওপর এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ ছিল সাত লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা যেটি সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের খাতভিত্তিক বিশ্লেষণ বলছে, একক ব্যক্তিদের পাশাপাশি কর্পোরেট কোটি টাকার বেশি থাকা হিসাবের সংখ্যা কমে এসেছে।

চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যাংকখাতে একক ব্যক্তি কোটিপতিদের হিসাব সংখ্যা কমেছে ৬২০টি। এছাড়া এসব হিসাবে কমেছে আট হাজার ৯২৩ কোটি টাকা।

একক ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্ট হিসাবে চলতি বছর সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোটিপতিদের হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৮৬১টিতে। জুন প্রান্তিক শেষে এসব হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩৪ হাজার ৪৮১টি। 

সেপ্টেম্বর শেষে এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৩ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। জুন শেষে হিসাবে ছিল ৯২ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা।

৫ আগস্টে সরকার পতনের পর অন্যান্য খাতের সঙ্গে ব্যাংকিং খাতেও সংস্কার শুরু হয়।কয়েকটি ব্যাংক বন্ধ হওয়ে যাওয়ার গুজবে ব্যাংকখাত থেকে আমানত তুলে নেয় গ্রাহকরা। বিশেষ করে এই গুজবের প্রভাব পড়ে শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলোর ওপর। তাছাড়া প্রভাবশালী কিছু ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *