পাকিস্তান থেকে দ্বিগুণ পণ্য নিয়ে এলো সেই জাহাজ

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে আসা সেই জাহাজ। শুক্রবার সকালে দুবাই-করাচি হয়ে এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝান নামে জাহাজটি দ্বিতীয়বারের মতো বন্দরের বহির্নোঙরে এসে পৌঁছায়। 

এবার জাহাজটিতে সম্ভাব্য ৮২৫ একক কনটেইনার রয়েছে। এসব কনটেইনার নামিয়ে অন্তত ১ হাজার ২০০ একক কনটেইনার নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে শিপিং কোম্পানিটির। তবে জাহাজটি বন্দর জলসীমায় পৌঁছানোর পর সঠিক হিসাব পাওয়া যাবে।

পাকিস্তানের করাচি বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রামের সরাসরি কনটেইনার জাহাজ যোগাযোগ চালু হয় গত নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। প্রথমবার ৩৭০ একক কনটেইনার আনা হয় জাহাজটিতে করে। এর মধ্যে পাকিস্তান থেকে আনা হয় ২৯৭ একক কনটেইনার, বাকিগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।

শিপিং সূত্র জানায়, দুবাইভিত্তিক কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ‘ফিডার লাইনস ডিএমসিসি’ একটি কনটেইনার জাহাজ দিয়ে নতুন এই সেবা চালু করেছে। বাংলাদেশে কর্ণফুলী লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠানে রিজেনসি লাইনস লিমিটেড এই সংস্থার বাংলাদেশে স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে গ্রুপটির নির্বাহী পরিচালক আনিস উদ দৌলার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রথমবারের তুলনায় এবার পাকিস্তান থেকে কনটেইনার আনার হার বেড়েছে। এখন একটি জাহাজ ৩৮ থেকে ৪২ দিনে একবার আরব আমিরাত থেকে পাকিস্তান হয়ে চট্টগ্রামে আসছে। কনটেইনারের সংখ্যা বাড়লে নতুন এই পথে জাহাজের সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে।

নতুন এই কনটেইনার জাহাজের পরিষেবা চালুর সময় পাকিস্তান ও বাংলাদেশ ছাড়া আরও চারটি দেশ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দর থেকেও পণ্য আনা-নেওয়া করার ঘোষণা দিয়েছিল ফিডার লাইনস ডিএমসিসি। তবে দ্বিতীয়বার সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পাকিস্তান হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী রয়েছে জাহাজটি।

জানা গেছে, এবারের ট্রিপে ৭৮০ বক্সে ৮২৫ টিইইউ’স (২০ ফুট দীর্ঘ হিসেবে) কনটেইনার এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে নামানোর জন্য। এর মধ্যে দুবাইয়ের জেবল আলী বন্দর থেকে জাহাজে তোলা হয়েছে ১০৫ বক্সে ১২৬ টিইইউ’স এবং পাকিস্তানের করাচি থেকে তোলা হয়েছে ৬৭৮ বক্সে ৬৯৯ টিইইউ’স কনটেইনার। এসব কনটেইনারে রয়েছে- চিনি, সোডা অ্যাশ, ডেনিম ফেব্রিক, সুতো, ডলোমাইট লুম্পস, ন্যাচারাল ডলোমাইট, ড্রাই ফিশ (শুঁটকি), ইউপিএস, আলু, রেডিয়েটর কোর ইত্যাদি।

জাহাজ চলাচল পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান মেরিন ভেসেল ট্রাফিক ওয়েবসাইটে দেখা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পাকিস্তানের করাচি বন্দর হয়ে চট্টগ্রাম অভিমুখে রওনা হয় জাহাজটি। ১১ ডিসেম্বর করাচি বন্দর থেকে সর্বশেষ কনটেইনার বোঝাই করা হয় জাহাজটিতে। চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ আগমন ও অবস্থানের তথ্য নিয়ে প্রতিদিনের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, এবার জাহাজটিতে সম্ভাব্য ৮২৫ একক কনটেইনার এসেছে। এর পর খালি কনটেইনার নিয়ে ফিরে যাবে এটি।

শিপিং এজেন্ট, বন্দর ব্যবহারকারী ও আমদানিকারকদের মতে, দুবাই-করাচি-চট্টগ্রাম রুটে সরাসরি কনটেইনার জাহাজ চালু হওয়ায় মেরিটাইমে গুরুত্বপূর্ণ দুই বিবেচ্য বিষয় ভাড়া ও সময় সাশ্রয় হচ্ছে। এতে আগ্রহী হচ্ছেন এ রুটের আমদানি ও রপ্তানিকারকরা। জাহাজটির বাংলাদেশি এজেন্ট ও মূল মালিক এ রুটে আরেকটি নতুন জাহাজ নামানোরও পরিকল্পনা করছেন।

এর আগে গত ১১ নভেম্বর একই জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩২৮ বক্স কনটেইনারে ৩৭০ টিইইউস কার্গো নামানো হয়। 

কনটেইনারগুলোর মধ্যে বেশির ভাগেই ছিল টেক্সটাইল ও কাচ শিল্পের কাঁচামাল। এ ছাড়া পেঁয়াজ, আলু, গাড়ির যন্ত্রাংশ, রং তৈরির কাঁচামাল, চুনাপাথর, সোডা অ্যাশ, ম্যাগনেশিয়াম কার্বোনেট, ডলোমাইট ইত্যাদিও ছিল। এসব পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশের আকিজ গ্লাস কারখানা, প্যাসিফিক জিন্স, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, নাসির গ্লাস, এক্স সিরামিকস, হাফিজ করপোরেশন, এমআর ট্রেডিংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। 

সূত্র জানিয়েছে, পানামা পতাকাবাহী জাহাজটি এনসিটি জেটিতে কনটেইনার খালাস করবে। এরপর খালি কনটেইনার লোড করবে। এসব কাজ শেষ করতে দুদিন সময় লাগবে। জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে ইন্দোনেশিয়ার বন্দরের জন্য ৪০০ টিইইউ’স এবং মালয়েশিয়ার বন্দরের জন্য ৬০০ টিইইউ’স খালি কনটেইনার নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

দুবাই-করাচি-চট্টগ্রাম-মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া-ভারত-দুবাই রুটে ‘এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং’ জাহাজটি চালু করেছে। রিজেনসি লাইনস লিমিটেড জাহাজটির বাংলাদেশের লোকাল এজেন্ট। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *