চট্টগ্রামে এস আলমের ৯ কারখানা বন্ধ ঘোষণা

■ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ■

চট্টগ্রামভিত্তিক বিতর্কিত শিল্পগ্রুপ এস আলমের মালিকানাধীন নয়টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) গ্রুপটির মানব সম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিনের সই করা একাধিক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

বন্ধ ঘোষিত কারখানাগুলো হলো- এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড, এস আলম স্টিলস লিমিটেড, এস আলম ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং মিলস লিমিটেড, চেমন ইস্পাত লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড (এনওএফ), এস আলম পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড এবং ইনফিনিটি সিআর স্টিপস লিমিটেড।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে অনিবার্য কারণবশত আগামী ২৫ ডিসেম্বর হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারখানাগুলো বন্ধ থাকবে। তবে নিরাপত্তা বিভাগ, ডেলিভারি সেকশন ও জরুরি বিভাগ (ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক) খোলা থাকবে।

পুলিশ জানিয়েছে, মোট নয়টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে কর্ণফুলী থানার ছয়টি কারখানায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। পরবর্তীতে মালিকপক্ষের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তারা ফিরে যান। এস আলম স্টিলস লিমিটেড, এস আলম ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং মিলস লিমিটেড ও চেমন ইস্পাত লিমিটেড এই তিনটি কারখানায় কোনো বিক্ষোভ পরিলক্ষিত হয়নি।

কর্ণফুলী থানার ওসি মুহাম্মদ শরীফ বলেন, শ্রমিকরা জড়ো হওয়ায় আমাদের দুটি সেখানে যায়। একই সঙ্গে এস আলম কর্তৃপক্ষ এসেও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তারা চলে যান। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এস আলম গ্রুপের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে কারখানা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ এস আলম গ্রুপকে এলসি খোলার ক্ষেত্রে কোনো ব্যাংক যথাযথ সহযোগিতা করছে না। এমতাবস্থায় সাময়িকভাবে কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কর্ণফুলীর কালারপুল এলাকায় এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের হাজারখানেক শ্রমিক কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করছেন। কারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় পরিবার–পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়ার কথা জানান অনেক শ্রমিক।

এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের নিরাপত্তা পরিদর্শক মোহাম্মদ ইউনুস জানান, কারখানা বন্ধের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, মূলত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছ থেকে সহযোগিতা না পাওয়ায় কারখানাগুলোর জন্য কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। ফলে উৎপাদন চালু রাখা যাচ্ছে না। এ জন্য সাময়িকভাবে কারখানা বন্ধ করা হয়েছে।

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ২০১৭ সালে গ্রপ প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরকে ব্যবহার করে (ডিজিএফআই) ইসলামী ব্যাংক দখল করে নেয়। এরপর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ আরও একাধিক ব্যাংক ও বিমা দখল করে নামে-বেনামে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেয়।

পাশাপাশি গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেও ঋণ অনুমোদন করা হয়। এই গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল ন্যাশনাল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার কালারপুল ও ইছানগরে কর্ণফুলী নদীর পাড় এবং বাঁশখালীর গণ্ডামারায় কারখানাগুলোর অবস্থান। জানা গেছে, এ সব কারখানায় নিয়োগপ্রাপ্ত এবং ক্যাজুয়াল মিলে ১২ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিক রয়েছেন। হঠাৎ কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন তারা।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *