হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়াল ভারত

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■

ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছে নয়াদিল্লি। হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য ঢাকার দাবি জোরালো হওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। 

গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান ৭৭ বছর বয়সী শেখ হাসিনা। ওই দিন ভারতের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে পৌঁছনোর পর থেকে তাঁর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।, যদিও তাকে দিল্লির একটি সেফহাউসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ঢাকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ২৩ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো স্বাক্ষরবিহীন কূটনৈতিক চিঠিপত্রের মাধ্যমে হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপরে উল্লেখিত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, দেশটিতে (ভারতে) থাকার সুবিধার্থে সম্প্রতি এই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। শরণার্থী ও আশ্রয়ের মতো বিষয়গুলো মোকাবেলা করার জন্য ভারতের কোনও সুনির্দিষ্ট আইন নেই উল্লেখ করে তারা হাসিনাকে দেশে আশ্রয় দেওয়ার জল্পনা-কল্পনা নাকচ করে দিয়েছেন।

ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর মতো বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্বাক্ষর প্রয়োজন। তাই এই পদক্ষেপটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় বিদেশী আঞ্চলিক নিবন্ধন অফিসের (এফআরআরও) মাধ্যমে তা করা হয়েছে।

গত ৩ জানুয়ারি হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, হাসিনাকে প্রত্যর্পণে বাংলাদেশের অনুরোধে সাড়া দেবে না ভারত সরকার। এ বিষয়ে অবগত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে অবগত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, এ ধরনের একটি বিষয়কে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় মূল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেনি ঢাকা।

এসব পদক্ষেপকে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে ভারতের ওপর চাপ বজায় রাখার চেষ্টা হিসেবে দেখছে নয়াদিল্লি।

হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কয়েক দিন পর তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর ভিসা বাতিল হওয়া ও ভারতে তাঁর আশ্রয় চাওয়ার খবর নাকচ করে দিয়েছিলেন। গত ৯ আগস্ট ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইকে তিনি বলেন, ‘কেউ তাঁর ভিসা বাতিল করেনি। তিনি কোথাও রাজনৈতিক আশ্রয়ও চাননি। সব গুজব।’

যাহোক, যুক্তরাজ্য সরকার বাস্তবিক অর্থেই আশ্রয়প্রার্থনার সম্ভাব্য যেকোনো আবেদন আটকে দিয়েছে। এর যুক্তি হিসেবে বলেছে, ব্রিটেনের বাইরে থেকে কাউকে আশ্রয়প্রার্থনার সুযোগ দেওয়া দেশটির অভিবাসনসংক্রান্ত আইনে নেই। কিছু খবরে এমনও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র হাসিনার ভিসা বাতিল করেছে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে এর আগে তারা বলেছিল, হাসিনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী হবে, সেটি তাঁর নিজের সিদ্ধান্তের বিষয়।

শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে ভারত এখনো কোনো মন্তব্য করতে প্রস্তুত নয়। গত শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে বাংলাদেশের বার্তা পাওয়ার কথা জানিয়েছিলাম। ওই প্রাপ্তিস্বীকারের বাইরে তেমন কিছু বলার নেই।’

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা ঘোষণা করেছেন, জুলাইয়ে বিক্ষোভের সময় গুম ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর।

অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন,‘পাসপোর্ট অধিদপ্তর জোরপূর্বক গুমের সঙ্গে জড়িত ২২ জনের পাসপোর্ট বাতিল করেছে ও জুলাই মাসের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৭৫ জনের পাসপোর্ট বাতিল করেছে।’

সাম্প্রতিকতম এসব ঘটনা এমন এক সময় ঘটল, যখন গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ব্যক্তিদের বিচারে গঠিত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৬ জানুয়ারি হাসিনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। হাসিনা ও অপর ১১ জনকে গ্রেফতারে পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে ট্রাইব্যুনাল আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্যানেলের সামনে হাজির করতে বলেছেন তাঁদের।

পিলখানা হত্যাকাণ্ড পুনঃ তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত স্বাধীন কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান একই দিন বলেছেন, ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহে ৭৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনার তদন্তের অংশ হিসেবে হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ভারত সফরে যেতে চান প্যানেলের সদস্যরা।

আ ল ম ফজলুর রহমানকে উদ্ধৃত করে বাসসের বরাতে বলা হয়, ‘(বাংলাদেশ) সরকার আমাদের অনুমতি দিলে তদন্তের স্বার্থে কমিশন ভারতে যাবে এবং শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।’

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তর। দুদিনে পিলখানায় নিহত হন ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। ভয়ংকর নির্যাতনের শিকার হয়ে বেঁচে ফেরেন ৫৫ জন। এ ঘটনার ১৫ বছর পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ৭ সদস্যের স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গঠিত সেই কমিশনের সঙ্গে সোমবার শহিদ পরিবারের সদস্যদের মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়। এতে উঠে আসে সেই সময়ের ভয়াবহ ও নির্মমতার কথা। সঠিক বিচার না হওয়ায় আক্ষেপ জানান স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যরা। বিডিআর হত্যাকাণ্ডকে সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত দাবি করে শহিদ পরিবারের সন্তানরা জানান, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে উন্মোচিত হোক প্রকৃত ঘটনা। বিচার হোক দোষীদের।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *