মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় পাসের হার ৪৫.৬২ শতাংশ

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬৫ জন। পাস করেছেন ৬০ হাজার ৯৫ জন। পাসের হার ৪৫ দশমিক ৬২ শতাংশ।

৩৭টি সরকারি কলেজের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৭২ জন। রোববার (১৯ জানুয়ারি) বিকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে পরীক্ষার ফল জানা যাবে।

রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার পর এ ফল প্রকাশ করা হয়। ১৭ জানুয়ারি এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাহ হোসেনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর, এসএসসি/সমমান এবং এইচএসসি/সমমান পরীক্ষার জিপিএ থেকে পাওয়া নম্বর এবং ভর্তি পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে পাঁচ হাজার ৩৭২ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে।

এ বছর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন এক লাখ ৩১ হাজার ৭২৯ জন পরীক্ষার্থী। পরীক্ষায় পাস নম্বর ছিল ৪০।

পাস করা ৬০ হাজার ৯৫ জনের মধ্যে ছেলে ২২ হাজার ১৫৯ জন, যা উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর ৩৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। মেয়ে ৩৭ হাজার ৯৩৬ জন, যা উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ নম্বর ৯০ দশমিক ৭৫।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ জানিয়েছে, সরকারি মেডিকেল কলেজে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময়সীমা আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

আর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির অনলাইন আবেদন গ্রহণের বিজ্ঞপ্তি আগামী ২৩ জানুয়ারি প্রকাশ হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ।

গত শুক্রবার সারাদেশের ১৯ কেন্দ্রের ৫৩টি ভেন্যুতে এক যোগে অনুষ্ঠিত হয় এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা।

দেশের সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা ৫ হাজার ৩৮০টি। আর বেসরকারি ৬৭টি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ২৯৩টি আসন রয়েছে।

জাতীয় মেধাক্রমে প্রথম থেকে তৃতীয় যারা

এ পরীক্ষায় জাতীয় মেধাক্রমে প্রথম হয়েছেন খুলনা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সুশোভন বাছাড়। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ৯০ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়ে শীর্ষস্থান অর্জন করেন তিনি। এবারে এমবিবিএস পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হার ছিল ৪৫ দশমিক ৬২ শতাংশ।

জাতীয় মেধাক্রমে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন মো. সানজিদ অপূর্ব বিন সিরাজ ও শেখ তাসনিম ফেরদাউস। সানজিদের স্কোর ৯০ দশমিক ৫। তিনি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আর তাসনিমের স্কোর ৮৯ দশমিক ৫০। তিনি তিনি যশোরের শেখ আব্দুল ওহাব মডেল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।

জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সারাদেশে মেধাতালিকায় প্রথম হওয়া সুশোভন বাছাড় জানান, ‘পরীক্ষা বেশ ভালো হয়েছিল। তবে বুঝতে পারিনি মেধাতালিকায় একেবারে প্রথম হয়ে যাব। আমার এ সাফল্যে আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এ সাফল্যের পেছনে আমার বাবা–মা, শিক্ষক, সহপাঠী সবার অবদান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে উন্মেষের অনেক অবদান রয়েছে।

সুশোভন এখন চিকিৎসক হওয়ার পথে। তার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হতে চাই। সবার মতো আমিও ডাক্তার হয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে চাই। বিশেষ করে আমি দুস্থ ও অসহায় মানুষদের নিয়ে কাজ করব। আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরা সু–চিকিৎসা পান না। আমি তাদের নিয়ে কাজ করতে চাই।

আসন ৫৩৮০টি

এবার কোটাসহ মেডিকেলে মোট আসন ৫ হাজার ৩৮০টি। এ হিসাবে এ বছর একটি আসনের জন্য ২৫ (২৫ দশমিক ১৪) পরীক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একই আসনের বিপরীতে ১ লাখ ৪ হাজার ৪৪ শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজগুলোয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছিলেন। সেই হিসাবে ওই বছর আসনপ্রতি ১৯ দশমিক ৩৪ শিক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন। এ বছর আসনপ্রতি ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বী পরীক্ষার্থী বেড়েছে।

দেশে মেডিকেল কলেজ ১১০টি। এর মধ্যে সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৭টি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ৬৭টি। এ ছাড়া একটি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও পাঁচটি বেসরকারি আর্মি মেডিকেল কলেজ আছে। সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হয় মেধাতালিকার ভিত্তিতে। আর ভালো কলেজে ভর্তি হন তালিকার ওপরে থাকা শিক্ষার্থীরা।

লিখিত পরীক্ষার নম্বর বিভাজন

বিষয়ভিত্তিক নম্বর বিভাজন হলো জীববিজ্ঞানে ৩০, রসায়নে ২৫, পদার্থবিজ্ঞানে ২০, ইংরেজিতে ১৫ ও সাধারণ জ্ঞানে (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি) ১০। পরীক্ষার সময় ১ (এক) ঘণ্টা। লিখিত পরীক্ষায় প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তরের জন্য ১ (এক) নম্বর প্রদান করা হয়। কোনো প্রশ্নের একাধিক উত্তর প্রদান করলে উত্তরটি ভুল বলে গণ্য করা হয়। প্রতিটি ভুল উত্তর প্রদানের জন্য শূন্য দশমিক ২৫ নম্বর কাটা যায়। লিখিত পরীক্ষায় ৪০ (চল্লিশ) নম্বরের কম প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা দেশে ভর্তি ও বিদেশে এমবিবিএস বা সমতুল্য কোর্সে ভর্তির অনুমতির জন্য অকৃতকার্য হিসেবে বিবেচিত হয়। লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের মেধাক্রমসহ ফল প্রকাশ করা হয়।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *