■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে দায়ের হওয়া বিস্ফোরক আইনের মামলায় জামিন পাওয়া তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস-বিডিআরের (বর্তমান বিজিবি) ১৭৮ জনের মুক্তিতে বাধা নেই।
মঙ্গলবার যাচাই-বাছাই শেষে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া তাদের জামিনের আদেশে স্বাক্ষর করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, “এ মামলায় গত ১৯ জানুয়ারি বিচারক একটি রায় দেন। সেখানে নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা ছাড়া বাকিদের জামিনের আদেশ দেন। আজ আদালত যাচাই বাছাই করে এমন ১৭৮ জনের তথ্য পেয়েছে। তাদের কেউ কেউ মারা গেছেন। বুধবার (২২ জানুয়ারি) তাদের জামিন নামা দাখিল করা হবে। এরপর তাদের জামিন সংক্রান্ত নথিপত্র কারাগারে গেলে তাদের নামে যদি অন্য কোনো মামলা না থাকে তাহলে তারা মুক্তি পাবেন।”
রোববার (১৯ জানুয়ারি) কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালত তাদের জামিনের আদেশ দেন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা। সেই বিদ্রোহের পর সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।
বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হলেও হত্যাকাণ্ডের মামলা বিচারের জন্য আসে প্রচলিত আদালতে। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে যায় ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের।
বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম একপ্রকার স্থগিত রেখে কেবল হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।
অন্যদিকে হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরও ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাইকোর্টে ৮৩ আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।