বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্য ঘোষিত তালিকা স্থগিত

■ সাহিত্য ডেস্ক ■ 

বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্য ঘোষিত নামের তালিকা স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪ ঘোষণা করা হয়।

পুরস্কার পেতে যাওয়া কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে ছিলেন কবিতায় মাসুদ খান, কথাসাহিত্যে সেলিম মোরশেদ, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে শুভাশিস সিনহা, প্রবন্ধ বা গদ্যে সলিমুল্লাহ খান, শিশুসাহিত্যে ফারুক নওয়াজ, অনুবাদে জি এইচ হাবীব, গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ হাননান ও ফোকলোরে সৈয়দ জামিল আহমেদ।

এই তালিকা প্রকাশের পর থেকেই ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকায় কোনো নারী কবি-সাহিত্যিকের অনুপস্থিতি এবং কিছু ক্যাটাগরি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এর জবাবে শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে উপদেষ্টা ফারুকী বলেন, ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কারের সঙ্গে মন্ত্রণালয় বা আমার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক নাই। আমাদের সরাসরি ভূমিকা আছে একুশে পদকের ক্ষেত্রে। তার পরও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে আমি এই পুরস্কার নিয়ে যে সমালোচনাগুলো হচ্ছে সেটা গ্রহণ করছি।’

তিনি লিখেছেন, ‘একজন নারী লেখককেও খুঁজে না পাওয়া বিস্ময়কর। এ ছাড়া কিছু ক্যাটাগরিতে যে প্রশ্ন উঠেছে সেগুলোও অযৌক্তিক নয়। সময় এসেছে, এই পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন প্রক্রিয়া সংস্কারের।’

তবে ফারুকীর সে স্ট্যাটাসের পরও সমালোচনা থামেনি। এর জেরে এবার পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সঙ্গে লিখেছেন, ‘যে আজব নীতিমালা এই ধরনের উদ্ভট এবং কোটারি পুরস্কারের সুযোগ করে দেয় সেগুলা দ্রুত রিভিউ করা আমাদের প্রথম কাজ। পাশাপাশি বাংলা একাডেমি কিভাবে পরিচালিত হবে, কোন সব নীতিতে চলবে- এই সব কিছুই দেখতে হবে। একাডেমির আমূল সংস্কারের দিকে আমরা যাব এখন। দেশের সংস্কার হবে, বাংলা একাডেমির সংস্কার কেন নয়?’

বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার তুলে দেবেন।

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ১৯৬০ সালে প্রবর্তিত। বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন শাখায় বছরে ৯ জনকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯৮৬ থেকে বছরে ২ জনকে এই পুরস্কার প্রদানের নিয়ম করা হয়। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে চারটি শাখায় পুরস্কার দেয়া শুরু হয়। ১৯৮৫, ১৯৯৭ এবং ২০০০- এই তিনবার এই পুরস্কার দেওয়া হয়নি।

১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালের ২৬ জুলাই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর দি বেঙ্গলি একাডেমি (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স জারি করেন। এর মাধ্যমে একাডেমির কার্যক্রমে কিছু পরিবর্তন আসে। তাদের কার্যাবলি সংশোধিত হয়ে সাহিত্য পুরস্কার প্রদান এবং বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন এবং ফেলো, জীবনসদস্য ও সদস্যপদ প্রদান যোগ করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৬০ সাল থেকে বাংলা একাডেমি বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য পুরস্কার দিয়ে আসছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *