ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ২০০ ফিলিস্তিনি

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■ 

যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ২০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। শনিবার গাজায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা চার ইসরায়েলি নারী সেনা জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পর ফিলিস্তিনিদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘কারাগারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন ও রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের পর ওফার এবং কেটিজিওট কারাগার থেকে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে।’’ চুক্তির দ্বিতীয় দফায় শনিবার মোট ২০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার সকালের দিকে গাজা নগরীতে এক অনুষ্ঠানে ইসরায়েলি চার জিম্মিকে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তাদের হাস্যোজ্জ্বল ও হাত নাড়িয়ে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা যায়।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফেরত আসা চার জিম্মি বর্তমানে আইডিএফের বিশেষ বাহিনীর সঙ্গে ইসরায়েলে ফিরছেন। সেখানে প্রথমে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর তারা পরিবারের কাছে ফিরে যাবেন।

মুক্তিপ্রাপ্ত চার নারী সেনা হলেন- লিরি আলবাগ (১৯), কারিনা আরিয়েভ (২০), ডেনিয়েলে গিলবোয়া (২০) ও নামা লেভি (২০)।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধাদের গাজা সীমান্তের কাছে ইসরায়েলি একটি সামরিক ঘাঁটি ধ্বংস করেন। পরে সেখান থেকে ইসরায়েলি এই চার নারী সৈন্যকে ধরে নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা।

রেডক্রসের প্রতিনিধিদের হাতে তাদের তুলে দেওয়া হয়। সেখান থেকে রেডক্রসের সদস্যরা এই জিম্মিদের নিয়ে ইসরায়েলের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।

এর পরপরই মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের বহনকারী বাসগুলোকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের ওফার সামরিক কারাগার ছেড়ে যেতে দেখা যায়। ইসরায়েলের প্রিজন সার্ভিস বলেছে, ২০০ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের মধ্যস্থতায় গত রোববার (১৯ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ১১টার দিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়। প্রথম দফায় তিন নারী জিম্মিকে ছেড়ে দেয় হামাস। যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম দিনেই ৯০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়; যাদের সবাই নারী বা শিশু।

এরপর দ্বিতীয় দফায় বন্দি বিনিময়ের সময় তেল আবিবে ইসরায়েলি ও রামাল্লায় ফিলিস্তিনের আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। যুদ্ধবিরতি চলাকালীন হামাসকে প্রথম পর্যায়ে ৩৩ জন নারী, শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ও আহত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। ইসরায়েল প্রত্যেক বেসামরিক জিম্মি নাগরিকের বিনিময়ে ৩০ জন এবং প্রত্যেক সৈন্যের বিনিময়ে ৫০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। সেই হামলায় নিহত হয় অন্তত ১ হাজার ২০০ জন, পাশাপাশি ২৫০ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় যোদ্ধারা।

এ হামলার জবাব দিতে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রায় ১৫ মাস স্থায়ী হওয়া সেই অভিযনে গাজায় নিহত হয়েছেন ৪৭ হাজার ৩০০ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১১ হাজার ৫০০ জন। এছাড়া এখনও নিখোঁজ আছেন অন্তত ১১ হাজার মানুষ।

নিহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক লোকজন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া উপত্যকাটির ২৩ লাখ বাসিন্দাকে হতে হয়েছে বাস্তুচ্যুত।

এ চুক্তির ফলে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হবে এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে পারবেন। ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোকে প্রতিদিন গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে।

গত রোববার ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সই হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়। যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, গাজায় হামাসের হাতে থাকা ৩৩ জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ ৭৩৭ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করে দেবে। গত ১৮ তারিখে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ৭৩৭ জন ফিলিস্তিনির হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করে দেশটির বিচার মন্ত্রণালয়।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *