■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তি চূড়ান্তভাবে বাতিল করে আগামী এক মাসের মধ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর দাবি জানিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে ঢাকা কলেজ শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বারী সাগর।
তিনি বলেন, ‘আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিলের দাবি নিয়ে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আন্দোলন ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। আমাদের দাবি ছিল অধিভুক্তি বাতিল করে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করতে হবে। কারণ, যে লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয়েছে, সেটা প্রায় ৮ বছরেও অর্জন করা যায়নি। বরং অধিভুক্তির পর থেকে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মানের উন্নতির পরিবর্তে আরও ভোগান্তি বেড়েছে। এসব ভোগান্তির বিরুদ্ধে সময়ে-সময়ে অনেক আন্দোলন, সংগ্রাম হয়েছে। বস্তুত যা ছিল সংস্কারের আন্দোলন।’
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর গত সেপ্টেম্বরে আমাদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেটা আসলে আর সংস্কার নয়, আমরা চূড়ান্ত মুক্তির আন্দোলন শুরু করেছি। এ আন্দোলনের শুরু থেকে আমরা সব মহল থেকে পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি। দীর্ঘ আন্দোলনের পর আমাদের দাবির বাস্তবতা উপলব্ধি করে সরকারও সাড়া দিয়েছে। দাবি বাস্তবায়নে সরকার ইউজিসির সমন্বয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর একটি উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দেয়। যে কমিটি খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এ কমিটি সাত কলেজের সবগুলো কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে কথা বলেছে। আমরা প্রতিটি কলেজ থেকে ২০ থেকে ২২ জনের প্রতিনিধি গিয়ে ইউজিসিতে আমাদের সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা বলে এসেছি। এরপর ইউজিসির নেতৃত্বে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও কথা বলেছে। সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গেও কমিটির কথা হয়েছে। সবার সঙ্গে কথা বলে এ কমিটি সাত কলেজের সমন্বয়ে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করা সম্ভব, সে সম্পর্কিত রূপরেখা জাতির সামনে প্রকাশ করবে। সরকার সেটা বাস্তবায়ন করবে।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের ফোকাল পয়েন্ট আব্দুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাবির অধীনে চরম ভোগান্তির মধ্যে ছিলেন। সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে, ঢাবির অধীনে আমাদের পরিচয় সঙ্কটের বিষয়টি। সরকারকে আমাদের সমস্যার বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। তারা আমাদের কথা শুনেছে, দাবির যৌক্তিকতা উপলব্ধি করতে পেরেছে এবং সবশেষ চূড়ান্তভাবে সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের আশ্বাস দিয়েছে। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কিন্তু গতকাল সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ঘোষিত ছয় দফা দাবির একটি বাস্তবায়ন হয়েছে, বাকি দাবিগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। বাকি দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য আরও ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছি। এরপর সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত জানাব।’
এ সময় তিনি পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হচ্ছে —
১. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রকাশ করতে হবে।
২. এক মাসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
৩. সব বর্ষের চলমান পরীক্ষা পূর্বঘোষিত রুটিন অনুযায়ী চলমান রাখতে হবে।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর সঙ্গে চলমান সব শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৫. উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাত কলেজের চলমান সংকট নিরসনে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি, সাত কলেজের অধ্যক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আগামী দুই দিনের মধ্যে টেবিলটকের আয়োজন করতে হবে।
এর আগে, বিকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সাত কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা। যেখানে তাদের দাবিগুলো বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মেনে নেওয়া হবে বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এরপরই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নিউ মার্কেট থানা ঘেরাও এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বন্ধ করার কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সাত কলেজ নিয়ে জরুরি সভা ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাত কলেজের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সভা ডেকেছেন। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, এ জরুরি সভায় শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস. এম. এ. ফয়েজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান উপস্থিত রয়েছেন।
এর আগে, আজ বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সাত কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা।
বৈঠক শেষে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মঈনুল ইসলাম বলেন, সরকার আমাদের ছয় দফা দাবির বিষয়ে ইতিবাচক। যেগুলো তাৎক্ষণিক পূরণ করা সম্ভব, সেগুলো পূরণ করা হয়েছে। আমরা কর্মসূচি দিয়েছিলাম ২৪ ঘণ্টা পর সাত কলেজের সামনে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসসহ অন্যান্য বাস চলতে দেব না এবং নিউমার্কেট থানা ঘেরাওয়ের যে কর্মসূচি দিয়েছিলাম, সেই কর্মসূচি আমরা প্রত্যাহার করে নিলাম।