■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামসহ ৯ জনের পাসপোর্ট বাতিল করেছে সরকার।
অন্য আটজন হলেন- বিএসইসির সাবেক কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম, সাইফুর রহমান ও রেজাউল করিম, পরিচালক শেখ মাহবুব-উর-রহমান ও মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, অতিরিক্ত পরিচালক এস কে মো. লুৎফুল কবির এবং যুগ্ম পরিচালক মো. রশীদুল আলম।
এ বিষয়ে বিএসইসর নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, এ বিষয় সম্পর্কে আমার জানা নেই। অফিশিয়ালিও আমাদের কিছু জানানো হয়নি। ফলে পরবর্তী করণীয়ও কিছু নেই।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে তাদের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও মন্ত্রণালয় তাদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যার ফলে তারা দেশ ত্যাগ করতে পারবেন না। এই ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে যে বিএসইসিতে থাকাকালীন তারা শেয়ার বাজারে লুটপাটে সহায়তা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন ও অর্থ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী গোলাম তৌসিফ বলেন, ‘এখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো এখতিয়ার নেই। দুদকের মামলায় আদালত থেকে নির্দেশনা দিয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এটা করা হয়েছে।’
শিবলী রুবাইয়াতের বিদেশযাত্রায় গত ৯ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ নিষেধাজ্ঞা দেন। এ ছাড়া শিবলী রুবাইয়াত ও তাঁর ছেলে জুহায়ের সারার ইসলামের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের সব বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
শিবলী রুবাইয়াতের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ আছে। অভিযোগের মধ্যে আছে কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়াতে তিনি কারসাজিকারকদের নানাভাবে সহায়তা করতেন। তাঁর প্রশ্রয়ে শেয়ারবাজারে একটি চক্র গড়ে ওঠে। এই চক্র শেয়ারবাজার থেকে অর্থ লোপাটে নানাভাবে তাঁর কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা পেত।
এসব অভিযোগের পাশাপাশি বিনিয়োগ আকর্ষণের নামে বিদেশি রোড শো করার কারণে শিবলী রুবাইয়াত ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন।
গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তার অতি আস্থাভাজন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বিএসইসির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এর আগে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও চলতি বছরের ২৮ মে তাকে ৪ বছরের মেয়াদে পুনঃনিয়োগ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ২০২০ সালের ১৭ মে তাকে প্রথমবার বিএসইসির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১০ আগস্ট বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বিভাগে ফিরে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শিবলী রুবাইয়াত সশরীর না গিয়ে এক ব্যক্তিকে পাঠিয়ে বিভাগে যোগদানপত্র জমা দেন। তবে তিনি ক্লাস নেন না।
এ বিষয়ে বিভাগটির চেয়ারম্যান হাসিনা শেখ বলেন, শিবলী রুবাইয়াতকে শিক্ষার্থীরা বর্জন করায় তিনি ক্লাস নিতে পারছেন না। তিনি আড়াই মাসের ছুটি নিয়েছিলেন, যা গত ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। ছুটি শেষ হওয়ার পর তিনি বিভাগে যোগ দেননি।
শিবলী রুবাইয়াত দেশে আছেন কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি বিভাগের শিক্ষকেরা।