অধিকাংশ ল্যাপটপ ব্যবহারকারীর প্রধান সমস্যা হলো ল্যাপটপ অতিরিক্ত গরম হওয়া। ল্যাপটপ অতিরিক্ত গরম হওয়ার কারণে অনেক সময় হার্ডডিস্কসহ ল্যাপটপের যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এমনকি বড় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। জেনে নিন, ল্যাপটপ ঠাণ্ডা রাখার উপায়।
১. সমতল স্থানে রাখুন
অধিকাংশ সময় ল্যাপটপ গরম হবার প্রধান কারণ হল অসমতল কোন জায়গা যেমন: বিছানা বা বালিশের উপর রেখে ব্যবহার করা। এ কারণে ল্যাপটপের নিচে বাতাস চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যায় ও এর অভ্যন্তরে তৈরি হওয়া তাপ বের হওয়ার সুযোগ পায় না। ফলে ল্যাপটপটি গরম হয়ে যায়। এজন্য, ল্যাপটপকে ঠান্ডা রাখতে যে কাজটি প্রথমে করতে হবে তা হল এটিকে সমতল কোন স্থানের ওপর রেখে কাজ করা। আর বালিশ বা বিছানার উপর রাখতে চাইলে ল্যাপটপের দুই পাশে দুইটি বই দিয়ে বাতাস চলাচলের জায়গাটা উন্মুক্ত রেখে তারপর ব্যবহার করতে পারেন।
২. চার্জিং ক্যাবল খুলে ফেলা
ল্যাপটপ ব্যাবহার করার সময় ফুল চার্জড অবস্থায় সবসময়ই উচিত চার্জিং ক্যাবলটি খুলে ফেলা। এরকম অবস্থায় সব সময় চার্জিং ক্যাবল লাগিয়ে রাখলে কার্যত ব্যাটারির আয়ু কমে যায়। ফলে ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার কারণে ল্যাপটপটি গরম হয়ে যেতে পারে। ব্যাটারিকে সবচেয়ে ভালো রাখতে সর্বোচ্চ ৮০% চার্জ করে ব্যবহার এবং ৪০% চার্জ ব্যয় করেই পুনরায় চার্জ দিন।
৩. অপ্রয়োজনীয়গুলো সফটওয়্যার বন্ধ রাখুন
মাঝে মাঝেই আমরা কাজ করার সময় বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার কাজে না লাগলেও চালু অবস্থায় মিনিমাইজ করে রাখি। ফলে অ্যাপটি ব্যাকগ্রাউন্ডে সচল থাকে এবং সিপিইউ এর উপর প্রভাব ফেলে। এতে করে অতিরিক্ত প্রেশার পড়ার ফলে গরম হয়ে যেতে পারে ল্যাপটপটি। এ কারণে সবসময়ই উচিত ল্যাপটপে যে কোন ধরনের কাজ করার সময় অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোকে মিনিমাইজ করে না রেখে বন্ধ করে রাখা উচিত।
৪. ব্রাউজারের ট্যাব সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ
ব্রাউজারে অনেক গুলো ট্যাব একসাথে ওপেন করলে প্রত্যেকটি ট্যাবই চালু থাকে এবং সিপিইউ এর উপর প্রভাব ফেলে। অপ্রয়োজনীয়ভাবে একসাথে অনেক গুলো ট্যাব খোলা রাখলে সিপিইউ এর উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে ল্যাপটপটি।
৫. কুলিং প্যাড ব্যবহার
ল্যাপটপ দীর্ঘসময় ব্যবহারের ক্ষেত্রে কুলিং প্যাড ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়াটা খুবই প্রয়োজনীয়। কুলিং প্যাড ল্যাপটপের মধ্যে থেকে গরম বাতাস বাইরে বের করে দেয় এবং ঠান্ডা বাতাস ভিতরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়,ফলে ল্যাপটপ ঠান্ডা থাকে। এজন্য ল্যাপটপের সুস্থতার কথা চিন্তা করে আমাদের উচিত কুলিং প্যাড ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়া।
৬. ল্যাপটপের ব্যাটারি পরিষ্কার
ব্যবহারের পর ল্যাপটপের ব্যাটারি খুলে রাখুন। অবশ্যই প্রতি দু-তিন মাস অন্তর ল্যাপটপের ব্যাটারি কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করুন। এটি ব্যাটারি থেকে পাওয়ার ট্রান্সফারকে অনেক বেশী কার্যক্ষম রাখে।
৭. ল্যাপটপের হার্ড ড্রাইভ বেশী বেশী ব্যবহার
সিডি বা ডিভিডি ড্রাইভ অনেক বেশী চার্জ কনজিউম করে। তাই,সিডি বা ডিভিডি ড্রাইভের পরিবর্তে ল্যাপটপের হার্ড ড্রাইভ বেশী বেশী ব্যবহার করুন। সিডি বা ডিভিডি ড্রাইভের মধ্যে কোন সিডি বা ডিভিডি কাজ ব্যতীত অহেতুক ড্রাইভে রাখবেন না,কারন এতেও চার্জ কনজিউম হয়।
৮. ওয়াইফাই সুইচ বন্ধ রাখুন
প্রয়োজন না হলে ল্যাপটপের ওয়াইফাই সুইচ বন্ধ রাখুন। ওয়াইফাই সুইচ বা ওয়াইফাই সেটিংস থেকে অফ করতে পারবেন। এতে ল্যাপটপ ঠাণ্ডা থাকবে।
৯. হাইবারনেশন মোড
ল্যাপটপের চার্জ বাঁচানোর জন্য হাইবারনেশন মোড বা স্ট্যান্ডবাই মোড হতে অনেক বেশী কার্যকরী। উল্লেখিত দুই মোড এই কাজ যে পর্যন্ত সংরক্ষন করা হয়েছিল ল্যাপটপ চালু করলে সেখান থেকেই কাজ পুনরায় শুরু করতে পারবেন। তাই হাইবারনেশন (Hibernation) মোড এ রাখাই শ্রেয়।
১০. এক্সটারনাল ডিভাইস
ল্যাপটপের ইউএসবি পোর্টে প্রয়োজন ব্যতীত এক্সটারনাল ডিভাইস লাগিয়ে রাখবেন না। এক্সটারনাল যে কোন ডিভাইস লাগিয়ে রাখলে তা প্রচুর চার্জ কনজিউম করে,তাই কাজ শেষ হলেই এক্সটারনাল ডিভাইস খুলে ফেলুন। যা ল্যাপটপ ঠাণ্ডা রাখতে সহায়ক।
১১. ব্যাকগ্রাউন্ড প্রোগ্রাম
ব্যাকগ্রাউন্ডে রানিং প্রোগ্রাম গুলো সিপিইউ এর উপর অতিরিক্ত লোড সৃষ্টি করে,ফলে ব্যাটারি চার্জ ও অনেক ব্যয় হয়। যখন ব্যাটারি মোডে আছেন,তখন যে ব্যাকগ্রাউন্ড প্রোগ্রামগুলো অত্যন্ত প্রয়োজন নয় সেগুলো শাট ডাউন করে দিন। ল্যাপটপ ঠাণ্ডা থাকবে।
১২. ল্যাপটপের ব্রাইটনেস
ল্যাপটপের ডিসপ্লে, কিবোর্ড ব্যাকলাইট এর অনেক বেশী ব্যাটারি জুস প্রয়োজন হয়। নিজের সুবিধামত ল্যাপটপ এর ব্রাইটনেস কমিয়ে অ্যাডজাস্ট করুন, কিবোর্ড ব্যাকলাইট (যদি থাকে) অফ করে দিন।
১৩. ল্যাপটপ বন্ধ করার পর
ল্যাপটপ বন্ধ করার পর ১০-১৫ মিনিট সাথে সাথে ব্যাগে না ঢুকিয়ে বাইরেই রাখুন। এতে ব্যাটারি ও ল্যাপটপ ইন্টারনাল দ্রুত ঠাণ্ডা হতে পারে।