আখেরি মোনাজাতে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপ

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

টঙ্গীর তুরাগতীরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে। 

রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা ১০ মিনিটে শুরু হয়ে এ মোনাজাত শেষ হয় ৯টা ৩৬ মিনিটে। মোনাজাত পরিচালনা করেছেন মাওলানা জুবায়ের আহমেদ।

মোনাজাতে মহান আল্লাহর দরবারে অশ্রুভেজা চোখে ক্ষমা প্রার্থনা ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করা হয়। 

লাখো মুসল্লির কাতারে শরিক হয়ে পরম করুণাময়ের দরবারে হাত পেতেছেন খোদাপ্রেমী এসব মানুষ।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বাদ মাগরিব টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম জমায়েত শুরু হয়। শুরায়ে নিজামের প্রথম পর্বের প্রথম ধাপের তিন দিনের এ ইজতেমায় লাখো মুসল্লি অংশ নিয়েছেন।

ইজতেমার আয়োজকরা জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে দুই ধাপে। এর মধ্যে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশগ্রহণ করেছে ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মুসল্লিরা। 

মোনাজাতে অংশ নিতে ভোর থেকে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে হাজার হাজার মুসল্লি হেঁটে ইজতেমা স্থলে যোগ দেন। মোনাজাত শুরু হওয়ার আগেই ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। ময়দানে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিরা আশপাশের অলিগলি, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, ফুটওভার ব্রিজ, বাসাবাড়ি, কলকারখানা, মার্কেট ও যানবাহনের ছাদে এবং তুরাগ নদের নৌকায় অবস্থান নেন। আখেরি মোনাজাতের জন্য ইজতেমা ময়দানের আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।

মুসল্লিদের পদচারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরা হাউজ বিল্ডিং থেকে গাজীপুর, টঙ্গী-ঘোড়াশাল আঞ্চলিক সড়কের টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে আমতলী, আবদুল্লাহপুর আশুলিয়া সড়কের বেড়িবাঁধ পর্যন্ত ছিল প্রচুর মানুষের সমাগম। এ ছাড়া তুরাগ নদের পাড়ে, ভিড়ানো নৌকা, আশপাশের দোকানপাট, কারখানায় ছিল প্রচুর মানুষ।

ইজতেমা আয়োজক কমিটির গণমাধ্যম সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, আজ সকাল থেকে ময়দান ও আশপাশে ৬-৭ লাখ মুসল্লি জড়ো হন। আগামীকাল থেকে শুরু হবে শুরায়ে নেজামের তত্ত্বাবধানে ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপ।

বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে গণপরিবহন সংকটে পড়তে হয়েছে অফিসগামী যাত্রীদের। বিশেষত টঙ্গী থেকে উত্তরামুখী সড়কে গণপরিবহনের জন্য ভোগান্তি বেশি দেখা গেছে। গাজীপুর বা টঙ্গী থেকে যান চলাচল বন্ধ থাকায় তাদের এ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। দু-একটি বাস এলেও ভিড়ের কারণে ওঠার উপায় ছিল না।

এরপর আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশ নেবেন ২২ জেলা ও ঢাকার বাকি অংশের মুসল্লিরা। ৮ দিন বিরতি দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করবেন ভারতের মাওলানা সাদ অনুসারীরা। ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমা।

বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম আয়োজন হয়েছিল ১৯৪৬ সালে কাকরাইল মসজিদে। দিন দিন লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্প, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পর ১৯৬৭ সাল থেকে টঙ্গীর তুরাগ তীরে নিয়মিত আয়োজন হয় বিশ্ব ইজতেমার। বিশ্ব ইজতেমার আখেরী মোনাজাতকে কেন্দ্র প্রতি বছর ইজতেমার শেষ দিনে তাবলিগের সাথী ছাড়াও সাধারণ মুসলমানরা ভীড় জমান তুরাগ তীরে। কানায় কানায় ভরে উঠে পুরো টঙ্গী এলাকা। অনেকে আগের রাত থেকেই ময়দানের আশপাশে অবস্থান নেন। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *