তিতুমীর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হচ্ছে না

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার কোনো পরিকল্পনা অন্তর্বতীকালীন সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় নির্বাহী পরিষদের (একনেক) সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি সিদ্ধান্ত জানান।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘সাত কলেজ নিয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করার কাজ চলছে, তাতে তিতুমীর কলেজও থাকবে। শুধু তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় হবে না। এই দাবির কোনো যৌক্তিকতাও নেই। কারণ একটা সুশাসন ও সংস্কারের জন্য আমরা এসেছি।’

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, দেশের মোট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অর্ধেকই গঠিত হয়েছে সবশেষ সাত বছরে, যা বিশ্বে এক অনন্য রেকর্ড। আন্দোলন করা ভালো, কিন্তু পরীক্ষাও দিতে হবে। নিয়মিত ক্লাস যেন বাধাগ্রস্ত না হয় এবং জনদুর্ভোগ যেন না হয় সেদিকে নজর রেখে কর্মসূচি দেওয়া উচিত।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, দেশে অনেক ঐতিহ্যবাহী কলেজ আছে। যেমন, রাজশাহী কলেজ সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও আগে হয়েছে। তাহলে সেখানেও কি বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে? বর্তমানে পঞ্চাশের উপরে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যার অর্ধেকই হয়েছে গত ৭ বছরে। এসবের বাইরে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চাপ সৃষ্টি করবে। আমরা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেব না, যাতে আগামী সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি হয়।

সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। আজ রোববার ঢাকার মহাখালীতে কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া কলেজের সামনে কয়েকজন শিক্ষার্থী আমরণ অনশন কর্মসূচিও অব্যাহত রেখেছেন।

শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন তিতুমীর শিক্ষার্থীরা

প্রায় ২ ঘণ্টার অবরোধ শেষে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ছেড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা।

রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার পর তারা অবরোধ তুলে নিয়ে মিছিল করতে করতে ক্যাম্পাসে ফিরে যান। তবে রাত ১১টায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের সংগঠন তিতুমীর ঐক্য থেকে জানানো হয়েছে, রাত ১১টায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকেই পরবর্তী কর্মসূচি জানানো হবে।

এরআগে, সন্ধ্যা ৬টায় তিতুমীর কলেজকে কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই—শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের এমন মন্তব্যে ঘিরে ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ নামে অবরোধ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে, অবরোধ ছাড়ার ফলে এরই মধ্যে যান চলাচল শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমপির ট্রাফিক গুলশান বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্দোলনকারী ছাত্র ছাত্রীরা রাস্তা অবরোধ ছেড়ে দিয়েছেন। যান চলাচল শুরু হয়েছে।

আন্দোলনকারীরা বলেছেন, অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা না করলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে।

তাঁরা বলছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আন্দোলনকারীদের একজন সাদ উল হাসান সিফাত বলেন, ‘তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দেওয়ার দাবিতে কর্মসূচি চলবে। ২৮ বছর ধরে এই আন্দোলন চলছে। বর্তমানে আন্দোলন তীব্রতর রূপ পেয়েছে।’

বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, গুলশান থেকে মহাখালীর আমতলার দুই পাশের রাস্তায় রিকশা আর মোটরসাইকেল ছাড়া কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। তিতুমীর কলেজের ঠিক গেটের দুই পাশে বাঁশ বেঁধে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। গেটে সামনে শুয়ে অনশন করছেন ৯ জন শিক্ষার্থী। শুয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের শরীরে চলছে স্যালাইন। তাঁদের দেখতে ভিড় করে আছেন ২০-২৫ শিক্ষার্থী। মাঝেমধ্যে দু-একজন শিক্ষক এসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন।

সন্ধ্যার দিকে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর একটি বিক্ষোভ মিছিল গুলশান-১ এলাকায় আসে কিছু সময় অবস্থান নিয়ে আবার তিতুমীরে ফিরে যান।

স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরসহ সাত দফা দাবিতে আন্দোলনে নামা সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘আমরণ অনশন’ এবং দফায় দফায় সড়কে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিশ্ব ইজতেমার কথা বিবেচনায় এনে পূর্বঘোষিত ‘বারাসাত বেরিকেড টু ঢাকা নর্থ সিটি’ কর্মসূচি শিথিল করে আজ রোববার দিনভর মহাখালীতে কলেজের সামনের সড়কে বাঁশ দিয়ে রাস্তা আটকে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তরের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’ বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রাসেল আহমেদ। এর আগে তিনি কলেজের মূল ফটকের সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেন।

তিন শিক্ষার্থী হলেন গণিত বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান, বাংলা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের রানা আহদেম এবং অর্থনীতির অনার্স তৃতীয় বর্ষের ইউসুফ।

চিকিৎসক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘অনশনরত শিক্ষার্থীদের শরীরে পানি শূন্যতার কারণে তাদের ব্লাড প্রেশার কমে যাচ্ছে। এদের মধ্যে একজনের একদম প্রস্রাব হচ্ছে না। এই চিকিৎসাটা হাসপাতালে না নিয়ে এখানে করা সম্ভব হচ্ছে না।’

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *